বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি নূর চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য দিতে কানাডা সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জড়াল বাংলাদেশ।
নূর চৌধুরী কীভাবে কানাডায় বসবাস করছে (লিগ্যাল স্ট্যাটাস) সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আবেদন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
গত ৭ জুন দায়ের করা এই আবেদনে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল (আইনমন্ত্রী) এবং নূর চৌধুরীকে বিবাদী করা হয়েছে। কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা অনলাইন পত্রিকা নতুন দেশ এই খবর প্রকাশ করেছে।
আদালতে করা আবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের এপ্রিলে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে বৈঠক হয়। আলোচনায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কাউকে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে কানাডা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানাডা সফরেও নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে ট্রুডোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আর ট্রুডো জানান, তার দেশ এ বিষয়ে একটি উপায় খুঁজছে।
তবে নূর চৌধুরীর বর্তমান আইনি স্ট্যাটাস বিশেষ করে তাকে প্রি-রিমুভ্যাল রিস্ক এসেসমেন্ট স্ট্যাটাস’ দেওয়া হয়েছিলো কী না- সেই তথ্য জানাতে রাজি হয়নি কানাডা আদালত।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে অটোয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান নূর চৌধুরীর ‘প্রি রিমুভ্যাল রিস্ক এসেসমেন্ট’ এর হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়ে ইমিগ্রেশন মন্ত্রী আহমেদ হোসেনের কাছে চিঠি লিখেন। কিন্তু মন্ত্রী দুই কারণে সেই তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বলেন, নূর চৌধুরী তার গোপনীয়তা পেতে পারেন এবং কানাডা বাংলাদেশের মধেো কোনো ‘তথ্য বিনিময় চুক্তি’ নেই।
এরপর হাইকমিশনার তথ্য বিনিময় চুক্তি সই করতে আলোচনার প্রস্তাব দিলে কানাডা সরকার সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এরপরই বাংলাদেশ বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আবেদনে কানাডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ঘোষণারআবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ। বলেছে, নূর চৌধুরীর সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের ব্যাপক জনস্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি কানাডার মন্ত্রী অনুধাবন করতে পারছেন না।
আবেদনে বলা হয়, নুর চৌধুরী বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অপরাধে দণ্ডিত এবং বাংলাদেশের নীতিমালা পর্যালোচনা ও কানাডার সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের জন্য এই তথ্য জরুরি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বিচার শুরু করে আওয়ামী লীগ। এরও ১৪ বছর পর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ফাঁসি কার্যকর হয় পাঁচ জনের।
উচ্চ আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল মোট ১২ জনকে। দণ্ড কার্যকর হওয়া পাঁচ জন বাদে বাকিদের মধ্যে আজিজ পাশা মারা গেছেন বিদেশে। আর আবদুর রশিদ, মোসলেম উদ্দিন, শরীফুল হক ডালিম, রাশেদ চৌধুরী, নুর চৌধুরী এবং আবদুল মাজেদ পলাতক। এদের মধ্যে কানাডায় রাশেদ চৌধুরীর অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত।
কিন্তু দেশটি মৃত্যুদণ্ডবিরোধী হওয়ায় তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। আর এই বিষয়টি নিয়েই তাকে ফেরানোর জটিলতা রয়েছে।
গত ১০ জুন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নূর চৌধুরী আত্মস্বীকৃত খুনি, বাংলাদেশের আদালতে তিনি সাজাপ্রাপ্ত। তিনি কানাডায় বাস করছেন। একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কানাডার উচিত একজন খুনির আদালতের সাজা কার্যকর করতে সহায়তা করা।’
জবাবে ট্রুডো শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘আমি আপনার কষ্টটা বুঝি। এ বিষয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছে কানাডার কর্মকর্তারা।’
কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তার দেশে নূর চৌধুরীর নাগরিকত্ব নেই।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন