বাংলাদেশেকে সহায়তা করায় খুন হলেন রোহিঙ্গাদের সর্বোচ্চ শিক্ষিত নেতা আরিফ উল্লাহ। ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়া এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থী রোহিঙ্গাদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর কারণেই তরুণ এই রোহিঙ্গা নেতাকে খুন করা হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের ত্রাণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম করতে দিতেন না আরিফ। এ কারণেও উচ্ছৃঙ্খল রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরিফ উল্লাহর উপর ক্ষিপ্ত ছিল।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের কারণেই সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা পরিকল্পিতভাবে আরিফ উল্লাহকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে সর্বোচ্চ শিক্ষিত ছিলেন আরিফ উল্লাহ। তিনি মিয়ানমারে আকিয়াব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। মিয়ানমারে মংডুর খোদার বিলের এখলাস মিয়ার ছেলে আরিফ। গত বছর মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে তারা স্বপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন। আরিফ উল্লাহ ও তার ৩ ভাই উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেন।
আরিফ উল্লাহর বড় ভাই হাবিব উল্লাহ জানান, তার ভাই আরিফ উল্লাহ উচ্চশিক্ষিত। তিনি খুবই সৎ ও স্পষ্টবাদি ছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। মিয়ানমারে মংডুতে সবাই তাকে সম্মান ও মূল্যায়ন করতো। তার কথার গুরুত্ব দিতো।
বাংলাদেশে আসার পর থেকেই তার ভেতরে কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করতো। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন তার ভাই আরিফ উল্লাহকে খুব মূল্যায়ন করতো। ইংরেজি ও বাংলায় দক্ষতার কারণে এনজিও সংস্থার লোকেরাও বিভিন্ন সময় তার সাহায্য নিতো। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরে এলে আরিফ উল্লাহকে রাষ্ট্রপতির দোভাষী হিসেবে রাখা হয়েছিল। সাধারণ রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ আরিফের ভক্ত ও অনুসারী ছিল।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি উগ্রপন্থী রোহিঙ্গা গোষ্ঠী সক্রিয়। আরিফ উল্লাহ সবসময় এই উগ্রপন্থীদের বাংলাদেশের ভেতরে সন্ত্রাসী কাজে বাধা দিতেন। বিভিন্ন সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উগ্রপন্থী রোহিঙ্গা বাহিনীর তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন।
তৈয়ব উল্লাহ আরো জানান, বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসনকে সহায়তা করার কারণে প্রায় তার ভাইকে হত্যার হুমকি দিতো সন্ত্রাসীরা। তারা দুই বার আরিফকে হত্যার চেষ্টা করে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আরিফ গত ৬ মাস ধরে রাতে ঘরে থাকতেন না।
সোমবার সন্ধ্যায় আরিফ উল্লাহ প্রতিদিনের মতো অন্যত্র লুকাতে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা তার ভাইকে সিএনজি থেকে নামিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। আরিফ যদি বাংলাদেশের প্রশাসনকে সহায়তা না করতো, তাহলে তাকে এভাবে খুন হতে হতো না।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের জানান, আরিফ উল্লাহ খুবই টেলেন্ট ছিলেন। রোহিঙ্গাদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে কোনো কাজে তিনি পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতেন। এসব কারণে কিছু লোক তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। হয়তো ওই রোহিঙ্গারাই আরিফকে হত্যা করতে পারে। আরিফকে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। আরিফের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন