মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার বিতরণে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে মাগুরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিচালিত ভ্র্যামমাণ আদালতের তদন্তে এ অনিয়মের সত্যতা উঠে এসেছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার হাবিব ও ফারুক আহম্মেদ জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার দুপুরে মাগুরা সদর হাসপাতালে রোগীদের সরবরাকৃত খাদ্যর মান এবং খাদ্যতালিকা সরেজমিনে যাচাই করতে যান। যাচাইকালে দেখা যায় সরকার নির্ধারিত বরাদ্দ প্রতিটি রোগীর জন্য সকালে ও দুপুরে যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা সে পরিমাণ খাবার রোগীরা পাচ্ছেন না।
রোগীরা তাদের কাছে জানান, তাদের জন্য প্রতিদিন দুধ (ডানো) ও চিনি বরাদ্দ থাকলেও কখনই তা সরবরাহ করা হয় না। যে মাছ, মাংস দেওয়া হয় তা বরাদ্দের তুলনায় অতি সামান্য।
হাসপাতালের রাঁধুনি মশালচি সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন বরাদ্দকৃত চাল হতে ১ কেজি, মাংস হতে ১০০ গ্রাম এবং সবজি হতে ১ কেজি করে কম সরবরাহ করা হয়।
কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, খাসীর মাংস দেয়ার কথা থাকলেও দুপুর দেড় টা পর্যন্ত হাসাপাতালে রান্না ঘেরে কোন মাংস আসেনি। মঙ্গলবার ৮৮ জন রোগীর জন্য তিন কেজি পেপে ও ৫০০ গ্রাম আলু সরবরাহ করা হয়েছে। খাবারের তালিকায় চাল কুমড়া দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেওয়া হয়নি।
রাজন সরকার, হাছান আলী, নাজমা পারভীনসহ কয়েকজন রোগী জানান, তারা তিন-চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও কোন খাবার পাননি। হাসপাতালে তিনশ’ রেগী ভর্তি থাকলেও ৫০-৬০ জনকে খাবার দেওয়া হয়। যারা খাবার পান তার মানও ভালো না। পেয়িং বেডের রোগীদের দুধ এবং চিনি দেয়ার কথা থাকলেও কখনোই দেওয়া হয় না।
হাসপাতালের রান্নাঘরের বার্বুচি রেহেনা বেগম বলেন, খাসীর মাংস সরবারাহ করা কথা থাকলেও ঠিকাদার কখনোই তা দেন না। মাংসর পরিবর্তে পিলাই, ফুসফুস ও চামড়া সরবরাহ করেন। রুই মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও সরবরাহ করা হয় পোনা মাছ। দুধ, চিনি কখনোই সরবরাহ করা হয় না।
হাসপাতালে খাদ্য তালিকানুযায়ী প্রতিদিন পেইং বেডে রেগীদের জন্য দুধ, চিনি, কলা, ডিম ও সাধারণ বেডের জন্য পউরুটি, ডিম, কলা, ভাত, ডাল, বিভিন্ন শবজী সরবরাহ করার কথা। এ ছাড়া শনি, সোম, বুধবার দুপুরে ও রাতে ১১০ গ্রাম রুই মাছ এবং বৃহস্পতি, মঙ্গল, রোববার ৫৫ গ্রাম খাসীর মাংস এবং শুক্রবার দুই বেলা ১১২ গ্রাম করে মুরগীর মাংস রোগীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
শেখ ইসতিয়াক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, খাতা-কলমে রোগীদের জন্য সবকিছু বরাদ্দ থাকলেও তার চার ভাগের এক ভাগও সরবরাহ করা হয় না। সবই চুরি হয়ে যায়, দেখার কেউ নাই।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহে নিয়োজিত ঠিকাদার ফারুক আহম্মেদ জানান, তার লাইসেন্সে কাজ নেওয়া হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাব-ঠিকাদার হিসেবে খাবার সরবরাহ করেন। অনিয়ম হলেও তার কিছুই করার নেই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.সুশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, খাবার নিয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে বিয়ষটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন