হাজারীবাগ থেকে চামড়া কারখানা এক বছরেরও বেশি সময় আগে সরিয়ে ফেলা হলেও বেশ কয়েকটি কারখানা এখনও চালু থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, রাতের বেলায় চালু হয় চারটি কারখানা। কাজ শেষ হয় ভোরের আগে।
বিচ্চিন্ন করা বিদ্যুৎ আর পানির সংযোগও রাতে চালু হয় বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। তবে যেসব কারখানার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেগুলোতে গিয়ে আরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বুড়িগঙ্গার দূষণ কমাতে চামড়া কারখানাগুলো রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি সরকারকে। কারখানা মালিকরা নানা অজুহাতে বারবার পিছিয়েছেন এই চেষ্টা। পরে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ আর পানি বিদ্যুৎ বন্ধ করে এক বছর আগে হাজারীবাগ ছাড়তে বাধ্য করা হয় কারখানাগুলোকে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কারখানাগুলোতে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে যেতে বাধ্য করা হয়। ওই অভিযানের পর হাজারীবাগে এখন আর কোনো ট্যানারি থাকার কথা ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দিনে বন্ধ কিছু কারখানা চলছে রাতে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, হাজারীবাগ এলাকায় এখনো চালু আছে অন্তত পাঁচটি কারখানা। এর মধ্যে একটি চলেছে ঝাউচর, বালুরমাঠ নামক জায়গায়। যেখানে মাঝে মধ্যে দিনের বেলাও কাজ চলে। বেড়িবাঁধ থেকে বেশ কিছুটা ভেতরে হওয়ায় এর হদিস জানেন না অনেকেই।
দুটি কারখানা সক্রিয় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন হাজারীবাগ মোড়ে। যা চালু থাকে রাতভর। একই কায়দায় মূল হাজারীবাগে চালু আছে আরও দুটি কারখানা।
স্থানীয় চায়ের দোকানদার মজিবর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একটু চালাকি আছে। দেহেন গিয়া, ট্যানারি যেগুলা রাইতে চালু করে, হেডির একটার সামনেও সাইনবোর্ড নাই। এডি আগেই খুইলা ফালাইছে। সাইনবোড খুলছে তাও ধরেন চার- পাঁচ মাস।’
ট্যানারিগুলোর সামনে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও কোনো নামফলক নেই। কোথাও কোথাও ফেঙে ফেলা হয়েছে, কোথাওবা খুলে ফেলা হয়েছে ট্যানারি মালিকের নাম, ট্যানারির নাম, হোল্ডিং নম্বরের ফলক।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১০টার পর বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় এসব কারখানা। এরপর চলে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজ। এসময় কারখানার আশপাশে সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে থেমে যায় কাজ।
কারখানার আশপাশে পুলিশ বা সাংবাদিকদের আনাগোনা লক্ষ্য করার জন্য আছে আলাদা লোক। অপরিচিত কাউকে দেখলে তাৎক্ষণিক থামিয়ে দেয়া হয় মেশিন, নিভে যায় আলো। দিনে দেখে বোঝার উপায় নেই, রাতে এখানে কোনো কাজ হয়েছে। কিন্তু শুধু রয়ে যাচ্ছে দুর্গন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দা আজাহার উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখানে থাকি অনেক বছর। চামড়ার গন্ধ আমি চিনি। খালি আমি না এলাকার সবাই চেনে। ট্যানারি বন্ধ থাকলে এমন গন্ধ জীবনেও আইব না। এরা সারা রাত ট্যানারি চালায়। ট্যানারি তো সরে নাই, খালি নামে সরছে।’
অপর এক বাসিন্দা অভি বলেণ, ‘ট্যানারি একটা ছোট জিনিস না। এটা লুকিয়ে চালাক আর যেভাবেই চালাক।...সরকারই এখান থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিল, আবার সরকারি লোকই যদি ট্যানারি চালাতে সহযোগিতা করে তাহলে কীভাবে হবে? হাজারীবাগ তো সেই ট্যানারি পট্টিই থেকে গেল।’
স্থানীয়রা জানান, গুদাম খালি করার নামে দিনের বেলা প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
চামড়া পরিবহনের রাস্তা বেড়িবাঁধ। আর সিকদার মেডিকেলের কাছেই হাজারীবাগ থানার চেকপোস্ট। চামড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চামড়া বহনকারী গাড়ির চালক ঢাকাটাইমসের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে চামড়া বহনকারী একটি গাড়ির চালক জানান, কারখানার পুরনো মাল তারা অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও কার মাল, কোথা থেকে এনেছেন এ বিষয়ে কোনো উত্তর পাওয়া গেল না এই চালকের মুখেও।
বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু ট্যানারির জায়গায় পোশাক কারখানা করার কাজ চলছে। বেশ নিরাপত্তা বেস্টুনি দিয়েই চলছে অবকাঠামো নির্মাণ। আছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী। সেই সাথে নিষেধজ্ঞা রয়েছে সাধারণের প্রবেশের উপর। ছবি তোলায় আছে নিষেধাজ্ঞা।
যদিও শিল্প মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ট্যানারি স্থানান্তরের পর সেই জায়গায় নতুন করে কোনো শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে না।
(ঢাকাটাইম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন