বাংলাদেশ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই যুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৫০ জন, আটক হয়েছে ১৪,০০০। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী এবং তারা বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন শুরু থেকেই বলে আসছে – এগুলো বিচার বর্হিভূত হত্যা। কিন্তু সরকার সে দাবি অগ্রাহ্য করে অভিযান অব্যাহত রাখে।
বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, অভিযানে মানুষ হত্যা করে মাদক প্রতিরোধ করা যাবে না। যেসব এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে মাদক ঢুকছে সে দিকে সরকারকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। এর উৎস বন্ধ করতে হবে। ইয়াবাটা শুধু মিয়ানমার থেকেই আসে। আর অন্য মাদকগুলো আসে ভারত থেকে। ভারত ও মিয়ানামরের সাথে বৈঠক করে এর সমাধান করতে হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, তাকি, বশিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুরিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁও, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদীয়া, মালদাহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরে মাদক ঢুকছে। আর ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায়।
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং ফেনীতে৷ এছাড়াও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেন্সিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সব রুট দিয়ে দেশে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাঁজা ঠেকাতে বাংলাদেশের আহ্বানে ভারত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ফেন্সিডিল ও ফেন্সিডিল তৈরির উপকরণ সরবরাহ এবং বহন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত।
তবে মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঢুকছে কোটি-কোটি পিস ইয়াবা। ইয়াবার অবাধ প্রবেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশে। বেশির ভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে। মিয়ানমারের সাবাইগন, তমব্রু, মুয়াংডুর মতো ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, ধুমধুমিয়া, কক্সবাজার হাইওয়ে, উখিয়া, কাটাপাহাড়, বালুখালি, বান্দরবানের গুনদুম, নাইখ্যংছড়ি, দমদমিয়া, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আসলে ইয়াবার জন্য মিয়ানমারের পছন্দের বাজার ছিল থাইল্যান্ড। কিন্তু এরপর আমাদের দেশে এই মাদকের আসক্তের সংখ্যা কল্পনার বাইরে চলে যাওয়ায় ইয়াবার বড় বাজারে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এই বাজারের চাহিদা মেটাতে কক্সবাজার-টেকনাফের স্থল সীমান্তবর্তী ৬০-৭০টি স্পট দিয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে। কক্সবাজার, টেকনাফ সংলগ্ন উপকূলবর্তী সমুদ্রে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি ছোট-বড় নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযানে করে ইয়াবার চালান আসে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন