রাতের ফাঁকা সড়কে এমপি পুত্রের বেপরোয়া গতির গাড়ি কেড়ে নিলো নিরীহ পথচারীর প্রাণ। বিলাসবহুল ‘অডি’কার নিয়ে বনানী থেকে মহাখালি ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়েই চাপা দিলেন পথচারীকে। ধাক্কা খেয়ে ওই পথচারী ২০ থেকে ৩০ ফুট দূরে ছিটকে গিয়ে প্রাণ হারান। সংসদ সদস্যের স্টিকার যুক্ত ওই গাড়ি চালাচ্ছিলেন সাবাব চৌধুরী। তিনি নোয়াখালি-৪-এর সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে।
মঙ্গলবার (১৯ জুন) রাত সোয়া ১১ টার দিকে বনানী এলাকায় গাড়ি চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান সাবাব চৌধুরী। নিহত পথচারীর রক্তাক্ত দেহের পাশে গাড়ির নাম্বার প্লেট (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৭৬৫৫) পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া অডি গাড়ির লগোটিও ঘটনাস্থলে পড়ে ছিলো।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ঘটনাস্থলে আসা কাফরুল থানা পুলিশের এস আই সুজন জানান, এলোমেলোভাবে চলা বেপরোয়া গতির বিলাসবহুল অডি গাড়িটি মহাখালি ফ্লাইওভারে উঠতে যাচ্ছিলো। এমন সময় একজন পথচারী ফ্লাইওভারের মুখে বনানী সেতু ভবনের সামনে থেকে রাস্তা পার হচ্ছিলেন।পথচারিকে ধাক্কা দিয়ে ২০ থেকে ৩০ ফুট দূরে ঠেলে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ওই পথচারী মারা যান। এ সময় অডি গাড়ির নাম্বর প্লেট এবং লগো পড়ে থাকে সড়কে।
ঘটনা দেখে সঙ্গে সঙ্গে একজন মোটরসাইকেল আরোহী এমপি পুত্রের প্রাইভেট কারের পিছু নেন। তাকে অনুসরণ করে ধানমন্ডি পর্যন্ত আসেন ওই মোটরসাইকেল চালক। এরপর ধানমন্ডিতে মোটরসাইকেল চালকের চিৎকার শুনে আরেকজন তরুণ প্রাইভেট কার চালক এমপি পূত্রকে অনুসরণ করতে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাবাবের অডি কারটি এমপি হোস্টেলের দিকে প্রবেশ করে। এরপর গাড়ি থেকে নামেন সাবাব। ততক্ষণে অনুসরণকারী প্রত্যক্ষদর্শীও মোটরসাইকেল চালকও উপস্থিত হন।
এ সময় মহাখালির দুর্ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে ক্ষেপে গিয়ে উদ্যত আচরণ শুরু করেন সাবাব। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল চালকের মোবাইলে দুর্ঘটনা দৃশ্য আছে জানালে মোবাইল কেড়ে নেয় সাবাব।
এ সময় সাবাব তাদের জানায়, ‘বাসের সঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছি, কেউ মারা গেছে কি-না জানি না’।
তরুণ প্রাইভেটকার এ চালকের বাসা বনানীতে। এমপি পুত্রের সঙ্গে কথা বলে ফেরার পথে দুর্ঘটনা স্থলে নিহতদের লাশ, পুলিশ ও উদ্ধারকারীদের দেখতে পান।
পরে সে সাবাবকে চেনে বলে- কাফরুল থানায় জানায়। থানা পুলিশ বার্তা২৪.কমকে জানায়, প্রাইভেটকার চালক সাবাবের বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন। সাবাবকে প্রায়ই গুলশান বনানীতে গাড়িসহ আড্ডা দিতে দেখা যায়।
এদিকে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা গাড়ি নাম্বারটি বিআরটিএতে তাৎক্ষণিক যাচাই করে দেখা যায়, গাড়ির মালিকের নাম কামরুন নাহার শিউলি। তিনি সাবাবের মা। নোয়াখালি সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান তিনি। আর তার স্বামী সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনেও স্বামীর নাম হিসেবেও একরামুল করিমের নামও রয়েছে।
সাবাব চৌধুরী ফেসবুক আইডি ঘুরে দেখা গেছে, দেশে-বিদেশের সড়কে বিলাসবহুল গাড়ি চালানো তার সখ। নিউজিল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে এমন তথ্য রয়েছে তার ফেসবুক প্রোফাইলে।
এদিকে দুর্ঘটনার বিষয়ে সাবাবের বাবা সংসদ সদস্য একরামুল করিম ও মা কামরুন নাহার শিউলীকে বারবার ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে সাবাবেব মা শিউলী সকালে বার্তা২৪.কমকে ফোন করে বলেন, "আমি এখন নোয়াখালিতে। আমাদের ৫-৬টি গাড়ি আছে। আমার ছেলে যে ড্রাইভ করছিলো এটা কে দেখেছে। গাড়ি ড্রাইভাররা চালায়। আর আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে কিন্তু আমার ছেলে গাড়ি চালায় নি। সে বাংলাদেশে কেন গাড়ি চালাবে। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া এবং আসার পথে সে গাড়ি চালায়। দেশে সে গাড়ি চালায় না।
সাবাব চৌধুরী বাবার সাথে কিছুদিন আগে রাজনীতিতে সে নামছে তা দেখে একটি পক্ষ আমার ছেলের বিরুদ্ধে লেগেছে বলে মন্তব্য মনে করেন শিউলি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন