খরস্রোতা মনু নদী থেকে মৌলভীবাজারবাসীকে রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধ নির্মাণের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নদী ব্যবস্থাপনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই বাঁধ ভেঙে অথবা পাড় উপচে পানি প্রবেশ করে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষের স্বপ্ন। এ অবস্থায় নদী খননের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বরাবরের মতো পানি উন্নয়ন বোর্ড শোনায় আশার বাণী।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলা শহর থেকে ৭৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মনু নদী মৌলভীবাজার শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্ষায় গর্জে ওঠা এই নদীর ভয়াবহতা থেকে জেলাবাসীকে রক্ষার জন্য ১৯৭৫ সালে মনুর দুপাড়ে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। পরপর কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ দেয়া হয়। বছর বছর নদীর তলদেশে পলি জমে নদীর নাব্য কমতে থাকে। ফলে শুষ্ক মৌসুমের মরা মনু বর্ষায় মরণ কামড় দেয় দুকূলে। প্রতিবছর পানির ঢলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঘুমন্ত অবস্থায় যখন বাঁধ ভাঙার খবর শুনতে পাই আমরা, তখন তাড়াহুড়ো করে যে যার মতো করে বেরিয়ে প্রাণ নিয়ে বাঁচতে পেরেছি।’
এ অবস্থায় বাঁধ সংস্কার এবং খননের দাবি জানান স্থানয়ি বিশিষ্টজনেরা।
মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ডা. এম এ আহাদ বলেন, ‘বাঁধের নিচে যে প্লেটের উপরে আরসিসি ফাউন্ডেশন দিয়ে প্লাডওয়াল করা হয়েছিল। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে এই প্লেটের ক্ষতি করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫-৪০ বছর আগে নির্মাণ করা বাঁধ- যার কারণে মৌলভীবাজার সড়ক আজ কয়েক বছর ধরে হুমকির সম্মুখীন। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাইডওয়ালকে সংস্কার করা দরকার। এবং যে সমস্ত এলাকায় গাইডওয়াল নাই, সেসমস্ত এলাকায় এটি নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
অবশ্য নদী খননসহ নদী ব্যবস্থাপনার মহা পরিকল্পনার কথা জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘মনু নদী ড্রেজিংসহ চর অপসারণ করে দুইপাড়ের বাঁধ শক্তিশালী করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কাজ প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে কাজ শুরু করার নির্দেশনা আছে।’
১৯৭৫-৭৬ সালে শুরু হওয়া মনু প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণ কাজ চার দফায় শেষ করতে ব্যয় হয় প্রায় শতকোটি টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন