আর চার দিন পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। হঠাৎ উত্তপ্তও হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগও আসছে। বিএনপি বলছে, ভোটের ফল ছিনতাইয়ের ছক করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, পরাজয় জেনে ইস্যু সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আশঙ্কা ঘনীভূত হওয়ার আলামত পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুর নগরের বোর্ডবাজার এলাকায় কথা হয় এক চা দোকানির সঙ্গে। ভোটের বাতাস কী বুঝতেছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘বাও বেশি বালা বুঝা যাইতেছে না। মানুষ তো নানা কতা কয়। তয় কেউ বলে না ভোট সুষ্ঠু অইব। চারদিক থেইক্কাই শোনা যাইতেছে কেন্দ্র দখল হইয়া যাইব।’ কারা দখল করবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বুজুইন না, যাদের শক্তি আছে, ক্ষমতার জোর আছে, তারাই।’
টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকায় কথা হয় ভোটার জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। ভোটের প্রসঙ্গ উঠতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শুনতাছি, আমগর ভোট লাগব না। কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিলেও পারি, না দিলেও সমস্যা নাই। না দিলে চলার মানে বুঝার পর আর ভোট দেওনের ইচ্ছা নাই।’
টঙ্গীর একটি কলেজের শিক্ষক যিনি এলাকায় নানা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তিনি বলছিলেন, ‘শুরুতে নির্বাচনটা ভালো হচ্ছিল। স্থগিতাদেশ এবং পুনরায় তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের কাজে ভোটাররা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সন্দিহান। নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল এমপি-মন্ত্রীরা এলাকায় এসে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিদিন এমপি ও মন্ত্রীরা গাজীপুর মহানগরীতে এসে ইফতার মাহফিলে নৌকার পক্ষে জাহাঙ্গীর আলমের জন্য ভোট চেয়েছেন। আমরা পত্রিকায় ও টিভিতে খবরে এসব দেখেছি। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া। তাহলে তাদের ভাবমূর্তি উঁচু হতো। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ত। মানুষ মনে করছে না নির্বাচন কারচুপিমুক্ত হবে। নির্বাচন কমিশনের আচরণে আজ গাজীপুর সিটির নির্বাচন জৌলুসহীন হয়ে পড়েছে। প্রার্থীরাই মাঠে দাপাদাপি করছেন। ভোটারদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই।’
বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘পোলিং এজেন্টরা যাতে কেন্দ্রে না যায়, সে জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। এর আগে কাশিমপুর অঞ্চলের ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে। হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলার আসামিরা টঙ্গীতে ভোট চাইছে। সরকারি দলের লোকজন প্রশাসনের সহায়তায় ভোটের ফল ছিনতাইয়ের ছক করেছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, বিএনপি হতাশায় ভুগছে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ইস্যু সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। যেসব অভিযোগ তারা করছে, এসব অভিযোগ সব সময় অকারণেই করে থাকে। গাজীপুরে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।
আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন নিয়ে লোকজনের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গাজীপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। গত নির্বাচনে বিএনপির অপপ্রচারে দল হেরে গিয়েছিল। তা ছাড়া বিএনপিকে ভোট দিয়ে মানুষ ভুল করেছে বুঝতে পেরে এবার নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর এটা বুঝতে পেরে বিএনপি প্রলাপ বকছে।’ জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’ তিনি আরো বলেন, কাউকে যেন অন্যায়ভাবে হয়রানি না করা হয় সে জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ধরে রেখেছেন এবং ২৬ জুন পর্যন্ত তা বজায় থাকবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন