মুক্তিপণের টাকা দিয়েও অপহৃত কিশোর ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে অন্তর মাতুব্বরকে ফিরে পাননি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদি পাগলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গ্রিস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের স্ত্রী জান্নাতি বেগম। শুক্রবার ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সন্তানকে উদ্ধারের আকুতি জানান এবং ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অন্তর তালমা নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। লিখিত বক্তব্যে জান্নাতি বেগম জানান, অন্তর তার বড় ছেলে। গত ৭ জুন তারাবি নামাজ পড়ার জন্য রাত ৮টার কিছু আগে বাসা থেকে বের হয় সে। এরপর আর ফেরেনি। রাত ১০টার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায়
৮ জুন রাতে নগরকান্দা থানায় জিডি করা হয়। জিডি করে বাসায় ফেরার পরই অন্তরের মোবাইল থেকে তার মোবাইলে একটি ম্যাসেজ পাঠানো হয়। তাতে অন্তরকে অপহরণের কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একাধিকবার ফোন করে ও ম্যাসেজ পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ০১৮৭৬৭৬৮১২৮ নম্বরে ৫ লাখ টাকা বিকাশ করে পাঠাতে বলা হয়। ঘটনার পরপরই ৮ জুন তিনি পুলিশ ও র্যাব অফিসে গিয়ে অন্তরের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে আসেন। সর্বশেষ ১৪ জুন আবারও অন্তরের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ভাঙ্গার একটি প্রাইমারি স্কুলের ঠিকানায় যেতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর তাদের ভাঙ্গার বদলে তালমা জাইল্যা ব্রিজের কাছে এবং তারপর কোনাগাঁও চকের একটি শ্যালো মেশিন ঘরের মধ্যে টাকা রেখে আসতে বলা হয়।
জান্নাতি জানান, ‘তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। তাকে একা যেতে বলেছিল। কিন্তু ভয় করছে জানিয়ে কান্নাকাটি করলে তারা দুজন লোক নিয়ে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। তিনি নগরকান্দা থানার এসআই কবির ও অন্য দুজন পুলিশকে নিয়ে সেখানে যান। পুলিশদের আড়ালে দাঁড় করিয়ে মাত্র ১৫ গজ দূরে মেশিন ঘরে একটি হাঁড়ির মধ্যে মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা রেখে আসেন। তখন দেখতে পান, ছোট্ট টর্চের আলোয় দুজন লোক মেশিন ঘরে টাকা খুঁজছে। পুলিশও তাদের দেখে। তবে পুলিশ বলে, ‘টাকা নিয়ে যায় যাক, এখন ওদের ধরা যাবে না। টাকা গেলে টাকা পাওয়া যাবে, কিন্তু ছেলে গেলে ফিরে আসবে না।’ এ সময় অদূরে রাস্তায় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ছিলেন বলে জান্নাতি বেগম সাংবাদিকদের জানান। অপহরণকারীরা পুলিশের সামনেই মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আবারও লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপর ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে বললে প্রথমে অপহরণকারীরা জানায়, আধা ঘণ্টা পর ছেলেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাবে।
জান্নাতি বেগম আরও জানান, অপহরণকারীদের দেওয়ার আগেই মুক্তিপণের টাকা গুনে দেখেছিলেন নগরকান্দা থানার এসআই লুৎফর। যার একটি ছবি এবং ভিডিও তিনি সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। টাকা দেওয়ার আগে তিনি তার পরিবারের লোকজন ও পুলিশকে নিয়ে বৈঠক করেন। এ সময় টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে মুক্তিপণ দিয়েও সন্তানকে ফিরে না পেয়ে বিলনালিয়ার মোবারক মাস্টারের ছেলে খোকন মাতুব্বরকে (৩৫) প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন জান্নাতি বেগম।
টাকা গুনে দেখার ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই লুৎফর কোনো কথা বলতে রাজি হননি। নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ লুৎফর রহমান জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনজনকে আটক করা হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন