প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বেড়ে যায় কর্মজীবী মানুষের ব্যস্ততা। আর এই ব্যস্ততা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি বেড়ে যায় গাড়ি, জ্যাম আর সড়ক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে চালাতে হয় গাড়ি। কারণ আপনার সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে হাজারো মানুষের জীবন।
অনেকেই মানছেন না ট্রাফিক আইন। হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছেন চালক ও আরোহী। তাই একটুখানি সচেতনতাই পারে আপনাকে দুর্ঘটনা এবং আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে। অনেকে আবার ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে চেষ্টা করেন। যার ফল হয় ভয়াবহ। প্রাণহানি ঠেকাতে সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে। মনে রাখবেন একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।
এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব, অদক্ষ চালক, মাদক আর সড়কের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, আমাদের দেশের চালকরা বেশিরভাগই অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত। তারা একটু সুযোগ পেলেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালান। এ কারণে দিন দিন সড়কে মৃত্যুর হার বাড়ছে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব কমাতে হবে। এ ছাড়া তারা কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে গাড়ি চালাবেন তাদের সেই প্রশিক্ষণ দেয়া খুবই জরুরি।
অন্যদিকে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার লোভ, চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা, সড়কের অব্যবস্থাপনা আর দক্ষ চালকের অভাবকে দায়ী করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
এ ছাড়াও চালকদের মাদক গ্রহণের প্রবণতা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে বলে মনে করেন তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, চালকদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। আর বর্তমানে এই হার আরো বেড়েছে। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক কারণে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানোই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে যাতে জীবনহানি না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পরিবার সবসময়ই চায় আপনি এবং আপনার প্রিয় গাড়ি দুটোই থাকুক নিরাপদ। নিচের কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাবে।
সিট বেল্ট বাঁধা: নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গাড়ির সিট বেল্ট বাঁধা। প্রত্যেক দেশেই সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালান। অবশ্যই মনে রাখবেন, শুধু আপনি নন আপনার সঙ্গে থাকা যাত্রীদেরও সিট বেল্ট বাঁধতে বাধ্য করবেন। সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালানো এবং গাড়িতে চড়া দুটোই নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মনোযোগ: নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য যা প্রয়োজন তা হচ্ছে আপনার মনোযোগ। যখনই গাড়ি চালাবেন খেয়াল রাখবেন আপনার মনোযোগ যেন গাড়ি এবং রাস্তার দিকেই থাকে। কখনোই গাড়ি এবং রাস্তা থেকে মনোযোগ সরাবেন না। একটু অমনোযোগী ড্রাইভিংয়ের কারণে ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালক: অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালক দিয়ে কখনোই গাড়ি চালানো ঠিক নয়। কারণ বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে অদক্ষ চালকের জন্য। তাই এ ক্ষেত্রে গাড়ির মালিদের সচেতন হতে হবে।
রোড স্ক্যানিং বা রাস্তা বিশ্লেষণ: রাস্তা বিশ্লেষণ বা রোড স্ক্যানিং নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন গাড়ি চলাবেন তখন অবশ্যই আপনার চলার রাস্তাটিকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করবেন। গাড়ি চালানোর সময় রাস্তা সম্পর্কিত যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে সেগুলো হলো- রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা, রাস্তার লেনের পরিমাণ, রাস্তার গঠনগত অবস্থা, রাস্তার প্রশস্ততা।
গাড়ির গতিসীমা: গাড়ি চালানোর সময় কখনোই হুটহাট করে গাড়ির গতিসীমা বাড়াবেন বা কমাবেন না। হুটহাট গাড়ির গতি বাড়ানো বা কমানো প্রায়শই বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই যতদূর সম্ভব এই বিষয়টি মেনে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করবেন।
কথা বলা থেকে বিরত থাকুন: গাড়িতে চড়ে অনেক যাত্রী আছেন যারা ভাড়া ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যান- এটি কোনোভাবেই ঠিক নয়। গাড়ি চলানোর সময় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
প্রতিযোগিতা: অনেক সময় প্রতিযোগিতা করে অনেক ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই ঠাণ্ডা মাথায় গাড়ি চালান। আর মনে রাখবেন আপনি গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতায় নামেননি, নিরাপদে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে গাড়ি চালাচ্ছেন।
লুকিং গ্লাস: প্রত্যেকটি গাড়ির দুটি লুকিং গ্লাস থাকে। একটি ডান হাতের পাশে আরেকটি বাম হাতের পাশে। গাড়ি চালানোর সময় লুকিং গ্লাস দেখা জরুরি। কারণ আপনার পাশ দিয়ে কোন গাড়ি যাচ্ছে- তা আপনি সহজেই দেখতে পারবেন। আর নিরাপদে গাড়ি চালাতে পারবেন।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না: গাড়ি চালানোর সময় চালক নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বাসের দুর্ঘটনার কারণ নেশাগ্রস্ত চালক। তাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন