ঈদ শেষে রাজধানী ফিরছে পুরোনো চেহারায়। শুরু হয়েছে মানুষের কর্মব্যস্ততা। পথে কম-বেশি যানজটও আছে। তবে এসবের রেশ নেই কাঁচাবাজারে। ঢাকার কাঁচাবাজারগুলো এখনো ছুটির জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বেশির ভাগ দোকানপাটেরই ঝাঁপ বন্ধ। পাড়া-মহল্লার ছোট দোকানগুলোও বসেনি। জোগান কম থাকায় দাম বেড়েছে মাছ ও সবজির।
গতকাল শনিবার হাতিরপুল বাজারে কয়েক রকম মাছ কেনার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলেন শহিদুল ইসলাম। কিন্তু মাছের দাম বেশি হওয়ায় তিনি শুধু একটি রুই মাছই কিনলেন। ২ কেজি ওজনের সে মাছটিতে তাঁর খরচ হয়েছে ৬৮০ টাকা। তিনি বলেন, ‘ঈদের পরে প্রথম বাজারে এলাম। ফ্রিজও খালি। আবার মাংস খাওয়া হয়েছে অনেক। ভাবলাম পছন্দসই কয়েক ধরনের মাছ কিনব। কিন্তু দাম দেখে সাহস হলো না।’ ঈদের আগে যে রুই মাছের কেজি ২৬০ টাকা ছিল সেটা এখন ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেন আনোয়ারা বেগম। বাসায় মেহমান আসবে বলে ফর্দ হাতে বাজারে এসেছেন। কিন্তু বাজারে এসে জিনিসপত্রের দাম শুনে তালিকা থেকে কিছু পদ ছেঁটে ফেলতে হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ঈদ শেষে হাতে টাকা-পয়সা কম। সবজির দামও বেশি। মাছের বাজার খুব চড়া। ৮৫০ গ্রামের একটি ইলিশ কিনতেই ১৫০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানান আনোয়ারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে কাঁচাবাজারের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে সবজি ও মুরগির তুলনায় মাছের দাম বেশি বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা মোসলেম উদ্দিন বলেন, এখনো অনেক বিক্রেতা ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরেননি। তাই দোকানপাটও সব খোলেনি। আবার পাইকারি বাজারেও মাছের জোগান কম। তাই বাড়তি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকান বন্ধ। যা-ও খোলা হয়েছে, তাতে অন্য সময়ের তুলনায় মাছের পদ এবং পরিমাণ কম। এর কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের আরেক মাছ বিক্রেতা রফিকুল সর্দার বলেন, ‘ঈদভাঙা বাজারে টাকা-পয়সা কম। আবার মাছের দামও বেশি। কম করেই মাছ দোকানে তুলছি।’
তবে ঈদের পর ক্রেতাদের মধ্যে মাছের চাহিদা থাকলেও অনেকে দামের কারণে কিনতে পারছেন না অথবা পরিমাণে কম কিনছেন। বাজার ভেদে রুই মাছের কেজি ২২০-৩৬০, পাবদা ৫৫০-৭০০, শিং ৫০০-৮০০, শোল ৪৫০-৫৫০, চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকা। আর ৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ এবং ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকায়। এক কেজির ইলিশ কিনতে দুই হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।
হাতিরপুল বাজারে সবজি কিনতে এসে ক্রুদ্ধ মোতাহার মোল্লা বলেন, ‘মাছের বাজারে আগুন। সবজিরও দাম বেশি। মধ্যবিত্তরা কী খেয়ে বাঁচবে?’
সবজির গায়েও লেগেছে উত্তাপ। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৬০ টাকার ওপরে। কারণ হিসেবে জানা গেল, অফিস খুলে গেছে কয়েক দিন। অথচ অনেক সবজি বিক্রেতা এখনো ঈদ শেষে ফেরেননি। আবার পাড়া-মহল্লার সবজির দোকানগুলো খোলেনি। রাস্তার মোড়ের ভ্যানগুলোও বসেনি। ঢাকায় সবজি আসছেও কম। এর ফলেই দাম বেড়েছে।
শেওড়াপাড়া বাজারে ৬০ টাকা কেজিতে বরবটি কিনতে কিনতে রাকিব আহমেদ বলেন, দোকান আছে মাত্র দুটো। দাম যাচাইয়ের সুযোগ নেই। তাই বিক্রেতাদের ইচ্ছাই সব। অন্য সময়েও পাড়ার দোকানের সঙ্গে বাজারের দোকানে সবজির দাম কেজি প্রতি ১০-২০ টাকার পার্থক্য থাকে বলে জানান তিনি।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতি থাকায় এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এটা একটি সাময়িক সমস্যা, এ নিয়ে ভোক্তাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সপ্তাহখানেকের মধ্যে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন