প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যেকোনো ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমরা সব সময় যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে। স্থলসীমান্ত বিরোধের মতো অনেক ইস্যু আমরা এই প্রক্রিয়ায় সমাধান করেছি।’
বাংলাদেশ সফররত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী—উভয়েই মনে করেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতা নেওয়া। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিতে ভারত প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে তাঁর দেশের জনগণকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসেবে ওই সহযোগিতা করাই ভারতের জন্য স্বাভাবিক ছিল। এখন বাংলাদেশ ভারতকে নিরাপত্তা খাতে যে সহযোগিতা দিচ্ছে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সম্ভাব্য যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমরা ইতিমধ্যে দুই দফা ত্রাণসামগ্রী দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরে যাওয়ায় সহায়তার অংশ হিসেবে আমরা (ভারত) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘প্রি-ফেব্রিকেটেড’ ঘর নির্মাণসহ আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিতেও সহযোগিতা করছি।’
রাজনাথ সিং বলেন, ‘প্রি-ফেব্রিকেটেড’ ঘর নির্মাণ উদ্যোগেও ভালো অগ্রগতি আছে।
পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা ও রাজনাথ সিংহের আলোচনা প্রসঙ্গে বৈঠক সূত্র জানায়, পাকিস্তানে যে মাত্রায় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে সেগুলোকে উভয় নেতাই অত্যন্ত গুরুতর বলে অভিহিত করেছেন। গত শুক্রবারও সন্ত্রাসী হামলায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। উভয় নেতাই মনে করেন, পাকিস্তান যদি তার পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসবাদ সামাল দিতে না পারে তাহলে প্রতিবেশীদের কাছে ওই দেশটির সহযোগিতার আহ্বান জানানো উচিত।
সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছে, তারও প্রশংসা করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে তা অন্য দেশগুলো, বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য অনুকরণীয় মডেল। আজ পাকিস্তান আর বাংলাদেশের চিত্র পুরোপুরি বিপরীত।
এদিকে শেখ হাসিনা ও রাজনাথ সিংহের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রেস সচিব এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যেকোনো ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা সব সময় যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে। স্থলসীমান্ত বিরোধের মতো অনেক ইস্যু আমরা এই প্রক্রিয়ায় সমাধান করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদের তীব্র নিন্দা জানায়। সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার নীতির কারণে বাংলাদেশ তার ভূখণ্ড কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন। কলকাতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠককে ফলপ্রসূ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
পাকিস্তানে নির্বাচনী সমাবেশে দুটি পৃথক হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবারের এ সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকার আজ রবিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শনিবার এ ঘোষণা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি নির্দেশণায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে। শনিবার এক সরকারি ঘোষণায় জানানো হয়েছে, রবিবার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী হামলায় এ পর্যন্ত ১৫০ নিহত হওয়ার কারণে এ ঘোষণা দিয়েছে সরকার। খবর : দ্য ডনসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম।এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সফররত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী—উভয়েই মনে করেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতা নেওয়া।বাংলাদেশ সফররত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। হাসিনা ও সফররত রাজনাথ সিং এমন সময় পাকিস্তানকে সন্ত্রাস মোকাবেলায় সাহায্যের প্রস্তাব দিলেন, যখন বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবীতে মেধাবী শিক্ষার্থী তথা সর্বস্তরের জনগণের কোটা সংস্কারের দাবীতে চলমান আন্দোলন নৃশংস ভাবে দমনে সরকারি দলের ক্যাডারদের রাজপথে নামিয়েছে। বিরোধীদল লিফলেট বিতরণেও পর্যন্ত সরকার নিজের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করছে। বিরোধীদলের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন দমনেও পুলিশসহ নিজ দলীয় ক্যাডারদেরকে মাঠে নামাচ্ছে। সেজন্য অনেকের মন্তব্য, তাহলে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস মোকাবেলায় সাহায্য প্রস্তাব দিয়ে হাসিনা কি নিজ দলের ক্যাডারদের সেখানে পাঠাতে চাচ্ছেন!
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন