মহড়ায় জার্মানি এবং সুইডেনের তৈরি বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য টরাস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়
মহড়ায় জার্মানি এবং সুইডেনের তৈরি বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য টরাস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়
দক্ষিণ কোরিয়া বিমান থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার মহড়া চালিয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের সর্বশেষ পরমাণু বোমার পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এ মহড়া চালানো হলো। এ মহড়াকে দেশটির শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মহড়ায় জার্মানি এবং সুইডেনের তৈরি বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য টরাস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। তাজা গুলির এ মহড়ায় অত্যাধুনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে সঠিকভাবে আঘাত হানার সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আগাম হামলার প্রয়োজন দেখা দিলে টরাস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে সিউল। জাতিসঙ্ঘ নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে দেশটি পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে।
চলতি মাসের ৩ তারিখে হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। ছোট আকারের বোমাটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বসানো যাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
উ.কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় ৬.৩ মাত্রার ভূ-কম্পন হয়!
উত্তর কোরিয়া সর্বশেষ ২৫০ কিলোটন ক্ষমতা সম্পন্ন পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি সরকারি ধারণার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
বুধবার মার্কিন পর্যবেক্ষক গ্রুপ একথা জানিয়েছে।
পিয়ংইয়ং গত সপ্তাহে তাদের ষষ্ঠ ও সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর কথা উল্লেখ করে বলেছে, এটি ছিল একটি হাইড্রোজেন বোমা যা ক্ষেপণাস্ত্রে স্থাপন করা যায়। এ পরীক্ষার পরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে এবং তাদের পারমানবিক অস্ত্রের উচ্চকাক্সক্ষা নিয়ে উত্তেজনা ক্রমান্বয়ে তীব্র হয়।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক সংস্থা জানায়, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের এ পরীক্ষার ফলে যে ভূকম্পন হয় রিখটার স্কেলে তার তীব্রতা ছিল ৬.৩।
যদিও কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিটিবিটিও) নরওয়ে’র সংস্থা এনওআরএসএআর জানায়, পারমানবিক পরীক্ষার ফলে যে ভূকম্পন সৃষ্টি হয় রিখটার স্কেলে এর প্রাথমিক তীব্রতা ছিল ৬.১।
এর ফলে সংশ্লিষ্ট মার্কিন ওয়েবসাইট ৩৮ নর্থ জানায়, উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষা চালানো পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষমতা ছিল প্রায় ২৫০ কিলোটন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্র যে পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় সেটির ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫ কিলোটন। উত্তর কোরিয়ার এ পারমানবিক অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের ওই পারমানবিক বোমার তুলনায় প্রায় ১৬ গুণ বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন।
যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দেয়ার হুমকি উত্তর কোরিয়ার
জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা জারির পর দিনই কঠোর ভাষায় তার জবাব এলো উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে।
সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে, দেশটির বিরুদ্ধে সবশেষ যে নিষেধাজ্ঞা, আরোপ করা হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া এমন ভাষাতেই এসেছে পিয়ং ইয়ং-এর পক্ষ থেকে।
হুমকি পাল্টা হুমকির মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রকে ভীষণ রকমের 'যন্ত্রণা' দেয়ার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
জাতিসঙ্ঘে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হান টায়ে সং জেনেভায় এক বৈঠকে বলেন, তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক হবে। যা সম্পর্কে দেশটির কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আসলে যা ঘটতে যাচ্ছে তার তুলনায় এই অবরোধ কিছুই নয়। তিনি মনে করেন, নিরাপত্তা পরিষদে কোন ইস্যুতে সবার সম্মতি পাওয়াটা অনেক বড় ব্যপার।
তবে, সবশেষ অবরোধ উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে পুরো বিশ্বের একরকম ধৈর্য্যেরই বহিঃপ্রকাশ বলে জেনেভায় একটি নিরস্ত্রীকরণ বৈঠকে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি রবার্ট উড।
উড বলেন, 'গতকালের সিদ্ধান্ত উত্তর কোরিয়াকে খুবই পরিষ্কার একটি বার্তাই দেয়, আর তা হলো তাদের উস্কানিমূলক আচরণে পুরো বিশ্বই ক্লান্ত। আর বিশ্ব এখন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হচ্ছে। এই অবরোধ দেশটিকে তাদের পরমাণু অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বন্ধে সহায়তা করবে বলেই আমার বিশ্বাস।'
সর্বশেষ অবরোধে উত্তর কোরিয়ায় কিছু মাত্রায় অপরিশোধিত তেল, কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা এসেছে দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস তৈরি পোশাকে এবং অন্যান্য দেশে কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের ওপরও।
ইরানের সাহায্যে উ. কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র!
ব্রিটেনের কর্মকর্তারা সানডে টেলিগ্রাফকে দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন, "উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ইরান সহযোগিতা করেছে।"
ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল প্রকাশিত সাপ্তাহিক সানডে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, "ইরানের গোপন সহযোগিতার কারণে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হয়েছে।" প্রতিবেদনে আরো এসেছে, ব্রিটেনের শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, "এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, উত্তর কোরিয়া কারো সাহায্য ছাড়াই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে।" সানডে টেলিগ্রাফে আরো লেখা হয়েছে, "উত্তর কোরিয়াকে সহযোগিতাকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইরান ও রাশিয়া।"
এর আগেও উত্তর কোরিয়াকে জড়িয়ে ইরানের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল-তবে ভিন্নভাবে। চার বছর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার সময় পাশ্চাত্যের কোনো কোনো সংবাদ ও রাজনৈতিক মহল কোনো দলিল-প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করেছিল ইরানের সহযোগিতায় উত্তর কোরিয়া সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। সে সময় ওবামা সরকারের একজন ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছিল, "উত্তর কোরিয়ার পরমাণু তৎপরতা এবং ইরানের সঙ্গে দেশটির সহযোগিতা আমেরিকার জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়।"
দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও এক প্রতিবেদনে ইরান গোপনে পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে না উল্লেখ করে লিখেছে, "উত্তর কোরিয়া সরকার দাবি করেছে তারা যে পরমাণু ওয়ারহেড তৈরি করেছে তা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর স্থাপন করতে পারবে।" দৈনিকটি মন্তব্য করেছে, "উত্তর কোরিয়ার ডিজাইন অনুসরণ করে ইরানের শাহাব-তিন ক্ষেপণাস্ত্রে ওয়ারহেড স্থাপন করা হয়েছে যা কিনা বিপজ্জনক ও সংকট সৃষ্টি করবে।" ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ইরানের গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে সহযোগিতা বজায় রয়েছে বলেও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে মন্তব্য করা হয়েছে।
এ ছাড়া, পারচিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান গোপন পরমাণু তৎপরতা চালোতে পারে বলেও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন মহল থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে ইরান বরাবরই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এসেছে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএকে ওই কেন্দ্র পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছে। আইএইএও স্বীকার করেছে পারচিন নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র ইস্যুতে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে গোপন সহযোগিতা বজায় রয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরিয় উপদ্বীপে সংকট সৃষ্টির মার্কিন চেষ্টার ব্যাখ্যা দাঁড় করানো। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা ও তার মিত্রদের হুমকি ও অযৌক্তিক পদক্ষেপ নেয়ার কারণেই ওই অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পরমাণু পরীক্ষা থেকে বিরত থাকার শর্তে আমেরিকা যেসব প্রতিশ্রুতি উত্তর কোরিয়াকে দিয়েছিল তা পালন না করায় পিয়ং ইয়ং কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়। আর এখন আমেরিকা হুমকি ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ওই দেশটিকে নতজানু করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মূলত আমেরিকার প্রতি আস্থার অভাবেই উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।
উ.কেরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার শেষ পরিণতি কী?
উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। দেশ দুটি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কি না তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। হুমকি পাল্টা-হুমকির এই পরিস্থিতির শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এর সম্ভাব্য কিছু পরিণতি।
প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ : সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের নতুন একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। এর ফলে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণের চিন্তা বাদ দিয়ে উল্টো অভ্যুত্থান কিংবা বিদ্রোহ করে বসতে পারে। এই নীতির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ারও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দেশজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে সরকার। সামরিক তৎপরতামুক্ত এলাকার মাত্র ৪০ মাইল দূরেও রয়েছে এর অবস্থান। আগাম কোনো হামলা কিম জং উনকে নিরস্ত্রীকরণে ভালো ফল দেবে না বরং প্রতিশোধ নিতে তিনি বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা চালাতে পারেন।
সীমিত শক্তি প্রয়োগ : উত্তর কোরিয়াকে শাস্তিমূলক বার্তা পাঠানোর জন্য একটি জোরালো অবরোধ আরোপ করা যেতে পারে, যার মধ্যে থাকতে পারে শক্তি প্রয়োগও। তবে অবশ্যই সেটি হতে হবে প্রতিরক্ষামূলক আগাম হামলার চেয়ে কম মাত্রার। এর মধ্যে থাকতে পারে পরবর্তী আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক পরীক্ষা ক্ষেত্রে বোমা হামলা। তবে এ ক্ষেত্রে বড় একটি ঝুঁকি হচ্ছে উত্তর কোরিয়া হয়তো সীমিত শক্তি প্রয়োগ ও সর্বাত্মক যুদ্ধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তা নিবৃত করা কঠিন এবং তারা সব বিপজ্জনক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে।
উত্তর কোরিয়াকে নেতৃত্বশূন্য করা : উত্তর কোরিয়াকে নেতৃত্বশূন্য করা যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সমর পরিকল্পনার একটি অংশ। শোনা যাচ্ছে, শুধু এ কাজের জন্য দক্ষিণের একটি বিশেষ বাহিনীও রয়েছে। তবে এটি একটি ভুল পরিকল্পনা হতে পারে। বিশ্বে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জোরালো নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা লোকদের অন্যতম কিম জং উন। আবার তাকে হত্যা করা হলে তার চেয়েও উগ্র কেউ ক্ষমতায় বসবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। সেটি হলে যুদ্ধ আরো ত্বরান্বিত হবে।
অর্থনৈতিক চাপ জোরদার : ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দেশে পরিণত হয়েছে উত্তর কোরিয়া। চলতি সপ্তাহেও দেশটির ওপর নতুন কিছু অবরোধ আরোপ করেছে জাতিসঙ্ঘ। এগুলো আরো জোরদার করতে প্রয়োজন চীনের অংশগ্রহণ; কিন্তু তাতে দেশটির সরকার পতন হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা বেইজিংয়ের। বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার ‘অপরাধে’ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অবরোধ আরোপের আহ্বান জানাচ্ছেন মার্কিন ভাষ্যকাররা; কিন্তু তাতে পাল্টা-ব্যবস্থা নিতে পারে চীন। সেটি হলে সঙ্কটে পড়বে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। অধিকন্তু এটি আরো স্পষ্ট যে, এতে চোরাচালানের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা কিম সরকারের মনোভাব পাল্টে যেতে পারে।
আনুষ্ঠানিক আলোচনায় ফিরে আসা : বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া ছয় জাতি আলোচনায় ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই উত্তর কোরিয়ার। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, পিয়ংইয়ং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করলে এবং আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে রাজি হলেও তারা কেবল আলোচনায় বসবে। উত্তর কোরিয়া রাজি নয় এই শর্তে। উত্তর কোরিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়া হলেও তা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে কর্মসূচিতে প্রভাব ফেলবে। আরো অনেক দেশ তখন উত্তর কোরিয়ার পথ অবলম্বন করতে পারে।
উভয়পক্ষের সংযম : চীন ও রাশিয়া একটি প্রস্তাব দিয়েছে যাতে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা সামরিক মহড়া বন্ধ রাখলে উত্তর কোরিয়াও বন্ধ রাখবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। এতে অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার আত্মরক্ষামূলক সামরিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে কতটা আন্তরিক তা স্পষ্ট নয়।
নিঃশর্ত আলোচনা : উত্তর কোরিয়াবিষয়ক মার্কিন বিশেষজ্ঞ সেগফ্রেইড দুই পক্ষকে দ্রুত নিঃশর্ত আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিদর্শন করে আসা এই বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন তা না হলে ছোট কোনো উসকানিতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
উ.কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সঙ্কট কতটা উদ্বেগের?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি এমনভাবে মোকাবেলা করা হবে যা বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি।
আর উত্তর কোরিয়ার হুমকি, তারা প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন দ্বীপ গুয়াম দ্বীপে হামলা চালাবে, যেখানে প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ বসবাস করে।
এ সবকিছুই ঘটছে যখন উত্তর কোরিয়া এমন একপ্রকার পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সফল হয়েছে, যে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রে সংযোজন করা যাবে।
ফলে পুরো বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্রদের। একটি পুরাদস্তুর যুদ্ধ বেধে যা্ওয়া সম্ভাবনা কতটা? কতটা বিপদ অপেক্ষা করছে সামনে?
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়ে এখনি ততটা আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। তারা কিছু যুক্তিও তুলে ধরেছেন-
১. কোনো পক্ষই যুদ্ধ চাইছে না। কারণ কোরিয়া উপদ্বীপে একটি যুদ্ধ কারো জন্যই সুবিধা আনবে না।
উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের প্রধান লক্ষই হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি যুদ্ধ বেধে গেলে ক্ষমতার আসন নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।
বিবিসির যুদ্ধ বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কুস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হলে তা আরো বড় আকারে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে তা উত্তর কোরিয়ার জন্য হবে আত্মঘাতী। আবার ঠিক এই কারণে তড়িঘড়ি পারমানবিক অস্ত্রের মালিক হতে চাইছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জঙ-উন। কারণ আর যাই হোক, তিনি লিবিয়ার গাদ্দাফি বা ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের ভাগ্য বরণ করতে চান না।
আবার যুক্তরাষ্ট্রও সহজে উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালাবে না। কারণ তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যুদ্ধে অনেক প্রাণহানি ঘটবে, বিশেষ করে সাধারণ আমেরিকান আর সৈনিকদের। সর্বোপরি, ওয়াশিংটন এমন কোন ঝুঁকিতে যেতে চায়না, যার ফলে আমেরিকান ভূখণ্ডে কোন পারমানবিক হামলা হতে পারে।
২. শুধু কি কথার লড়াই?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে যেভাবে হুমকি দিয়েছেন, সেটা একজন প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যতিক্রম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র পুরোদমে যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে।
মার্কিন একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, উত্তেজক কথাবার্তা বাড়ছে মানে এই নয় যে, আমাদের অবস্থানও বদলাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, দুই দফা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর, জাতিসংঘের মাধ্যমে অবরোধ আরোপের সেই পুরনো পথেই পথেই হেঁটেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এখনো কূটনীতিকরা আশা করছেন, রাশিয়া আর চীনের সহায়তায় উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে।
যদিও কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, এরকম উত্তেজক পরিস্থিতিতে কোন ভুল বোঝাবুঝি থেকেও একটি যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।
৩. আগেও এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিজে ক্রাউলে যেমনটা বলেছেন, ১৯৯৪ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র একবার সশস্ত্র যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তখন পারমানবিক কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষককে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল দেশটি। তবে কূটনীতি দিয়েই তা সমাধান করা হয়েছে।
এরপর অনেক বার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু সেগুলো কখনো বাস্তব হয়নি।
আর এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে পাল্টা হামলার হুমকি দিচ্ছেন, তাও একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আচরণের পক্ষে যুক্তিসঙ্গত নয়। এটাই যা একটু আশংকার যে, তিনি হঠাৎ করে কোন কাণ্ড ঘটিয়ে বসবেন কিনা। তবে তার এ ধরণের কোন কাজে নিশ্চয়ই তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বাধা দেবেন।
আর তাই ট্রাম্পের এরকম ব্যতিক্রমী আচরণের কারণে করো উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই বলেই মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
আর তাই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াও আগাম একটি যুদ্ধের আশঙ্কায় খুব একটা উদ্বিগ্ন নয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন