মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্থায়ীভাবে শান্তি আনার জন্য এবং বেসামরিক মানুষদের ওপর সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১২ নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বের ১৮ বিখ্যাত ব্যক্তি। তাঁরা জানান, গত বছরই একটি খোলা চিঠিতে নিরাপত্তা পরিষদকে রাখাইনের পরিস্থিতি অবহিত করা হয়েছে। চিঠিতে মিয়ানমারের ভেতরে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ১২ নোবেল বিজয়ী হলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়াম্স, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, অসকার আরিয়াস সানচেজ, জোডি উইলিয়াম্স, শিরিন এবাদি, লেইমাহ বোয়ি, তাওয়াক্কল কারমান, মালালা ইউসুফজাই, চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার জয়ী স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস ও এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন। নোবেল বিজয়ীরা কেউ শান্তিতে আবার কেউ চিকিৎসাশাস্ত্রে পুরস্কার পেয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তাঁর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। দরিদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাহায্য করতে তিনি ক্ষুদ্র ঋণ দিতেন। নরওয়ে নোবেল কমিটি থেকে জানানো হয়, তৃণমূল শ্রেণী থেকেই দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় এবং এর মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করার কারণে তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
ডেসমন্ড টুটু দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ। ১৯৮০ সালে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন। তিনি এইচআইভি ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, লিঙ্গ বৈষম্যের বিপক্ষে, সমকামীতা ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পক্ষে প্রচারণা চালান। এজন্য ১৯৮৪ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
২০১৪ সালে পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই মাত্র ১৭ বছর বয়সে কৈলাস সত্যার্থির সঙ্গে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। শিশু ও তরুণদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম ও শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকায় নোবেল কমিটি তাঁকে এ পুরস্কার দেয়।
ইরানের আইনজীবী শিরিন এবাদি ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। তিনিই প্রথম মুসলিম ও ইরানি নারী যিনি এ পুরস্কার পান। নারী, শিশু ও শরণার্থীদের অধিকার রক্ষায় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর আন্দোলন তাঁকে এই পুরস্কার পেতে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন ক্রোমোজমে টেলোমেরেস এনজাইম আবিষ্কার করায় ২০০৯ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। ব্রিটিশ আণবিক জীববিজ্ঞানী রিচার্ড জে রবার্ট চিকিৎসাশাস্ত্রে ১৯৯৩ সালে ইউক্যারিওটিক ডিএনএতে ইনট্রন আবিষ্কারের জন্য এবং জিন স্পলাইসিং(জিন ছেদন) এর গঠন আবিষ্কারের জন্য নোবেল পান।
ইয়েমেনের সাংবাদিক তাওয়াক্কুল কারমান দ্বিতীয় মুসলিম নারী হিসেবে ২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। আরব বসন্তের সময় তিনি ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। নারীদের সুরক্ষায় ও অধিকার আদায়ে অহিংস আন্দোলনের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়। ইয়েমেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
লেইমা বোয়ি লাইবেরিয়ার একজন মানবাধিকার কর্মী। নারীদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে তিনি ২০০৩ সালে লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধ থামাতে সহায়তা করেন। যার ফলে ২০০৫ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে। বোয়ি ২০১১ সালে তাওয়াক্কুল কারমানের সঙ্গে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
মার্কিন রাজনৈতিক কর্মী জোডি উইলিয়ামস ভূমি মাইন নিষিদ্ধ ও অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ১৯৯৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। কোস্টারিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট অস্কার সানচেজ ১৯৮৭ সালে মধ্য আমেরিকার সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। আশির দশকে মধ্য আমেরিকায় সমাজতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছিল। এসময় সানচেজ এ সংঘর্ষ থামাতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেন।
মেইরেড মাগুইর ও বেটি উইলিয়ামস ১৯৭৬ সালে একসঙ্গে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁরা দুইজনে একত্রে উত্তর আয়ারল্যান্ডে কমিউনিটি ফর পিস পিপল নামে একটি সংগঠন চালু করেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডে সত্তর দশকে চলমান সংকট নিরসনে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করত। পরবর্তীতে তাঁরা গাজায় ইসরায়েল সরকারের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন