ধর্ষণ। শব্দটা শুনলেই মনের মধ্যে তীব্র একটা ঘৃণা তৈরি হয়। আর সেই সেই ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠে অভিযুক্ত কিংবা দোষী সাব্যস্ত হওয়া ধর্ষক। নির্ভয়া থেকে রোহতক কাণ্ড, সবেতেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় ধর্ষকদের। কিন্তু কারা এরা? কেনই বা এমন জঘন্য কাজ করেছে? এদের মধ্যে কি বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই? এতটা নৃশংস কেমন করে কোনো মানুষ হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ১ শ'র বেশি সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মধুমিতা পাণ্ডে। উত্তর হতভম্ব করে দিয়েছে ২২ বছরের তরুণীকে। ব্রিটেনের আংলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের ছাত্রী মধুমিতা। গবেষণার বিষয় হিসেবে বেছেছেন এই গর্হিত অপরাধ ও তার অপরাধীদেরই। সেই কারণেই গত তিন বছর ধরে ভারতবর্ষে এসে ধর্ষকদের জানার চেষ্টা করে চলেছেন। তিহার জেলে সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রথমে যখন এসেছিলেন, এদের কোনো রাক্ষস কিংবা পিশাচ জাতীয় প্রাণী মনে করতেন মধুমিতা।
কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর চিন্তাভাবনা পাল্টায়। মধুমিতা দেখেন, এই ধরনের অপরাধ যারা করেছেন প্রত্যেকেই অতি সাধারণ মানুষ। এ সমাজেরই উৎপত্তি। বেশির ভাগেরই পড়াশোনা বলতে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। আর নিজের কাজে খুব একটা আফসোস নেই। বরং এটা খুবই স্বাভাবিক তাদের কাছে। মধুমিতাকে চমকে দিয়েছিল ৪৯ বছরের এক ধর্ষকের সাফাই। পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করার জন্য জেল খাটছিল সে। মেয়েটির জন্য বড় ব্যথিত ছিল। শিশুকন্যার গোটা জীবনটাই শেষ করে দিয়েছিল, এর জন্য অনুশোচনায় ভুগছিল সে। তাই সে ঠিক করেছিল জেল থেকে সাজা কেটে বেরিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করবে। আর তার জীবন শুধরে দেবে।
এই তিন বছরে মধুমিতার মনে হয়েছে, ধর্ষণের অপরাধী কেবল ধর্ষক নয়। প্রকৃত অপরাধী এ সমাজ। যে সমাজ পুরুষকে শেখায় তুই শ্রেষ্ঠ, বলিষ্ঠ। আর নারীকে শেখায় ধৈর্য, শালীনতা, কমনীয়তা। যে সমাজে এখনো স্বামীর নাম ধরে ডাকার চল নেই। স্কুলে তেমনভাবে যৌনতা নিয়ে শিক্ষাই দেওয়া হয় না। প্রকাশ্যে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করাও পাপ হিসেবে ধরা হয়। সেই সমাজ কেমন করে নারীকে সুরক্ষা দেবে? জানাবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো প্রাণের মূল্য। কোনো মানুষের সম্মানের মাহাত্ম্য। নিজের এই গবেষণাপত্র খুব শিগগিরিই জমা দিতে চলেছেন মধুমিতা। এর জন্য ইতিমধ্যেই অনেকে তাঁকে ফেমিনিজম-এর পুরোহিত আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে দমে যাওয়ার পাত্রী নন ২২ বছরের যুবতী। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তিনি বিশ্বকে জানাবেনই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন