রাখাইন রাজ্যে একটি মসজিদের বাইরে বিস্ফোরণের জন্য রোহিঙ্গা জঙ্গিদের দায়ী করেছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান। তবে মানবাধিকার গ্রুপগুলো অভিযোগ করেছে, উদ্বাস্তুদের ফেরা বন্ধ করতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ওই অ লে গোলাবর্ষণ শুরু করেছে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আঙ সান সু চি পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা প্রশমিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নির্দোষ বেসামরিক লোকজন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এই উত্তেজনার সৃষ্টি হলো।
গত বুধবার সিনহুয়াসহ চীনা মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সু চি ওই আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, লোকজনের অধিকারের প্রতি যাতে নিরাপত্তা বাহিনী শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ যাতে না করা হয়, সেজন্য তিনি তাদেকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সু চি উল্লেখ করেন, রাখাইন ইস্যুর সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো লোকজনের মানসিকতার পরিবর্তন করা, ঘৃণা বা যুদ্ধ না করে সম্প্রীতিতে বসবাসের জন্য একে অপরকে আরো ভালোভাবে বোঝা। সু চি বলেন, সরকার রাখাইনে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু শনিবার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন আঙ হলাইঙ ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, শুক্রবার রাখাইনের বুধিডঙ টাউনশিপে একটি মসজিদ ও একটি মাদরাসার মাঝখানে ‘ঘরে তৈরি মাইন’ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।
মিয়ানমার সেনাপ্রধান অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসীরা প্রায় ৭০ হাজার গ্রামবাসীকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব লোক মি চাঙ জাইয়ে বাস করে আসছে।
তবে বিশ্লেষকেরা তার এই অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ গ্রামবাসীদের তাড়িয়ে দিলে সন্ত্রাসীদের কোনো লাভ নেই। সন্ত্রাসীরা যদি থাকেও, তবু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের যত বেশি উপস্থিতি থাকবে, তাতে তাদের লাভ হবে বেশি।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের গ্রামবাসীরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে চায় না। কিন্তু সন্ত্রাসীরা নামাজের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রামবাসীদের সন্ত্রস্ত্র করতে চাইছে।
তিনি বলেন, এটা আরসা সন্ত্রাসী গ্রুপের কাজ। উল্লেখ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কথিত হামলার পরই সর্বশেষ এই নৃশংস অভিযান শুরু করে মিয়ানমার বাহিনী।
শুক্রবারের ওই বিস্ফোরণে কেউ আহত হয়নি। সরকারি বাহিনী এলাকাটি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।
রাখাইনে সামরিক অভিযানের পর চার লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে।
মানবাধিকার গ্রুপগুলো দাবি করছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীই যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
গত শুক্রবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নতুন ভিডিও ও স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে নিশ্চিত করে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলো এখনো পুড়ছে। ইতোমধ্যেই অসংখ্য রোহিঙ্গা বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা হয়।
অ্যামনেস্টির তিরানা হাসান বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে বাড়ি ফিরতে না পারে সেই পরিকল্পনা করেই এসব বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শনিবার জানায়, রোহিঙ্গাদের চলাচল বন্ধ করার জন্য মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে স্থলমাইন বসাচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন