২০১৯ সালের এপ্রিল-মে মাসের বদলে ২০১৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই ভারতের সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এছাড়া আগামী এক–দেড় বছরের মধ্যে যেসব রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে সেখানকার নির্বাচনও একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেশটির অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের হঠাৎ জরুরি বৈঠক ঘিরে আগাম জাতীয় নির্বাচনের এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগের দিন ভারতের নির্বাচন কমিশন জানায়, ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর ভারতজুড়ে একযোগে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারবে কমিশন।
ভারতীয় বাংলা দৈনিক আজকাল জানিয়েছে, মোদির ডাকে ম্যাঙ্গালোর থেকে বিমানে করে তড়িঘড়ি করে দিল্লি পৌঁছেন অমিত শাহ। অন্যদিকে অরুন জেটলি তিনদিনের ঢাকা সফর শেষে দেশে ফিরেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ৭ নম্বর জনকল্যাণ মার্গে ছুটে যান।
সেখানে মোদির নেতৃত্বে তিন শীর্ষ নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অমিত শাহের কাছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে লোকসভা এবং বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চান মোদি।
এছাড়া অরুন জেটলির কাছে মোদির প্রশ্ন রাখেন, ভারতের বর্তমান আর্থিক মন্দাকে কতদিনের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা যাবে।
এর জবাবে অরুন ও অমিত শাহ উভয়ই মোদিকে আশ্বস্ত করে জানান, সরকার এবং দল যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি।
অমিত শাহ বলেন, উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিষয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি- এস রাজ্যে বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনের মতো ভাল ফল করবে।
তিনি আরও জানান, যখনই নির্বাচন হোক না পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বিজেপি যথেষ্ট ভাল ফল করবে। গুজরাট, মহারাষ্ট্র বা দক্ষিণের রাজ্যগুলোতেও ইতিবাচক ফল আসবে।
বৈঠকে অরুন জেটলি দাবি করেন, ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যতটা বলা হচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়।
অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জানিয়ে চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই সমালোচকরা ভুল স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবে বলে দাবি করেন তিনি।
দৈনিক আজকাল
নদীর ওপাড়ে কাঁদে মানবতা!
শরতের মেঘলা আকাশ। থেমে থেমে বৃষ্টি। শো শো বাতাসের আওয়াজ। কাদাজলে লেপ্টে বসে আছে কয়েকজন অভুক্ত নারী ও শিশু। চোখেমুখে আতংক, ভয়। মুখে ভাষা নেই। চোখের ভাষায় বলছে বড় অসহায় তারা। দিনের সূর্য উঠছে আবার অস্ত যাচ্ছে, কিন্তু ওরা ঠায় বসেই আছে, পার হতে চায় ছোট্ট দ্বীপ। উঠতে চায় নৌকায়, কিন্তু পারে না।
এ দৃশ্য টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ওপারে।টাকা-পয়সার অভাবে তারা নদী পার হতে পারছে না। বেশ কয়েক দিন ধরে তারা দ্বীপের ওপাড়ে নদীর ধারে বসে কাঁদছে।
মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম নির্যাতনের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ওরা আশ্রয় নিয়েছে শাহপরীর দ্বীপের ওপারে।তাদের অনেকের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বসতবাড়ি।
নদীর পাড়ে বসা হাসিনা যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমারের সেনাদের হাতে নিহত হয়েছে হাসিনার স্বামী জাভেদ। তার বাসাবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছেন। নেহাত গরিব হওয়ায় পরনের কাপড় ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই।
ওই নারী জানান, দুধের সন্তানসহ আরও দুই শিশু বাচ্চাকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে নদীর ধারে বসে আছেন।
একই নদীর ধারে বসা আমেনা, বিলকিল ও নূরীসহ অন্য নারীরা জানান, তাদের বিভিন্ন দুর্দশার কথা। হত্যা করা হয়েছে স্বজনদের, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বসতবাড়ি।জীবন নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে এসছেন তারা, সঙ্গে দুধের শিশু সন্তান।
শাহপরীর দ্বীপের মাঝি মনা যুগান্তরকে জানান, এই নারী-শিশুরা বেশ কয়েক দিন ধরেই এখানে বসে আছে। ভিনদেশি হওয়ায় রাস্তাঘাট চেনেন না। কারও সঙ্গে কথাও বলে না।
নৌকায় শাহপরীর দ্বীপ পার হচ্ছিলেন আব্দুল্লাহ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, শাহপরীর দ্বীপে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছেন তিন দিন আগে। আর ফেরার দিনও তাদের নদীর পাড়েই দেখছেন।
গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরএসএ)। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্যসহ ৮৯ জন মারা যান বলে মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য।
এর পরই রাজ্যটিতে শুরু হয় সেনা অভিযান।অভিযানে হাজারো অধিক নিরীহ রোহিঙ্গা মারা গেছেন। আর প্রাণ বাঁচাতে সর্বস্ব হারিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন