সিরিয়ার সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ গ্রান্ড মুফতি আহমদ বদর উদ্দিন মোহাম্মদ আদিব হাসুয়ান ভারতের আশংকা সমর্থন করে বলেছেন, মিয়ানমারের সর্বশেষ দফার সহিংসতা উস্কে দেওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক। এর ফলে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। রোহিঙ্গাদের অনেকে ভারতে পর্যন্ত গেছে।
সিরিয়ান গ্রান্ড মুফতি সম্প্রতি নয়া দিল্লি সফর করেন। তিনি সেখানে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে সাক্ষাত করেন। তিনি কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সাথেও কথা বলেন। এই রাজ্যেও রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক সাইয়িদ নাকভি তার ব্লগে বলেছেন, ভারতের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ভূমিকা রয়েছে রোহিঙ্গাদের অভিবাসনের পেছনে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গ্রান্ড মুফতিও।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলযোগে বিদেশী সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ পেতে থাকে ২০১২ সালে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান ছিলেন সিরিয়াবিষয়ক দায়িত্বে। তিনিই রিয়াদে তার অফিসে হাফিজ তাহা নামের এক রোহিঙ্গাকে আমন্ত্রণ জানান।
নকভি বলেন, তাহাকে রাখাইনে নীরবে অবস্থান করে গোপন দল গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল দুটি: প্রথমত সনাতন সুফিবাদ থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে ওয়াহাবি মতবাদে টেনে আনা এবং দ্বিতীয়ত, রাখাইন এলাকার পাশে অবস্থিত চীনের কুনমিংয়ে দীর্ঘ মেয়াদি অস্থিরতার বীজ বপণ করা। মান্দালয়ায় ক্রমবর্ধমান চীনা প্রাধান্যে পাশ্চাত্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল।
নকভি বলেন, বিদেশী প্ররোচনায় উত্তেজনা নতুন কোনো ঘটনা নয়।
গত ২৫ আগস্ট সেটাই ঘটে। আরসা একইসাথে রাখাইনে ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায়। পরিণতিতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী নৃশংস প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
নকভি লিখেছেন, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ইতিহাসের নজিরবিহীন নৃশংসতা চালায়। নিরাপত্তা বাহিনী পলায়নপর বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলিবর্ষণ করে, সীমান্তের কাছে মাইন বসায়।
বিদেশী ভূমিকার ইতিহাস
নকভি বলেন, ১৯৭৯ সালে ইরানে (শিয়া) বিপ্লবের পর সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরে শিয়াবিরোধী উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, সৌদি সমাজের প্রতি বড় ধরনের বিপদ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় ইরানের প্রতি বিশ্বের নজর নিবদ্ধ করে রিয়াদ। তারা যেখানেই সম্ভব, সেখানেই ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেয়। নিজ স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রও সৌদিদের সাথে যোগ দেয়।
তারপর আফগানিস্তান থেকে রুশ প্রত্যাহারের পর সেখানে সক্রিয় জঙ্গিদের সৌদি পৃষ্ঠপোষকতায় কাশ্মির, মিসর, আলজেরিয়া ইত্যাদি দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এই ভূত আবার বোতলে ভরতে ব্যর্থ হয়ে তার স্বার্থেই সহায়ক বাহিনী হিসেবে এসব জঙ্গিদের ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নকভি বলেন, পরাশক্তিগুলোর ম্যাকিয়াভেলিয়ান ষড়যন্ত্রের সর্বশেষ শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা।
নকভি বলেন, রোহিঙ্গারা জাতি হিসেবে বহিরাগত অর্থপুষ্ট রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির খপ্পরে পড়ে যায়।
তিনি বলেন, এ কারণেই ভারত রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে চায়। মানবিকতার দোহাই দেওয়া সত্ত্বেও ভারতে অবস্থানতর ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভারত কোনোভাবেই রাখতে চাচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন