পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে ২ বিলিয়ন ডলারের ‘কারোত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে’র কাজ নিরর্ধারিত সময়ের আগে শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে চীন। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ‘চায়না থ্রি জর্জেস সাউথ এশিয়া ইনভেস্টমেন্ট’। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তা পাকিস্তানের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দেশটির বেকারত্ব কমাবে বলে জানিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানটি।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কারোত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক চায়না থ্রি জর্জেস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কারোত পাওয়ার কোম্পানি লি:। গ্লোবাল টাইমসের কাছে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কারোত পাওয়ার জানায় যে এই প্রকল্প পাকিস্তানের অর্থনীতি শক্তিশালী করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা বিদ্যুৎ সমস্যা। এমনকি রাজধানী ইসলামাবাদসহ প্রাদেশিক রাজধানীগুলোকে বিদ্যুৎ শেয়ারিং করে চলতে হয়। প্রত্যন্ত অনেক এলাকায় দিনের ১২ ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকে না।
এবছরের গ্রীষ্মের শুরুতে পাকিস্তানে ৫০ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিলো বলে কারোত পাওয়ার স্টেশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
কারোত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৭২০ মেগাওয়াট। এছাড়া ‘চায়না থ্রি জর্জেস’ পাকিস্তানে আরো কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এগুলোর মধ্যে জলবিদ্যুৎ, বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এগুলো দেশটির বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে ব্যাপক সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে ভারত বরাবরাই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
এ ব্যাপারে সাংহাই একাডেমি অব সোস্যাল সাইন্স-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইন্সটিটিউটের রিসার্চ ফেলো হু ঝিইয়ং গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, ‘বিতর্কিত কাশ্মীরে চীনা কোম্পানি প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর থেকে ভারত বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এতে পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, এই সম্পর্কে ভারতকে টার্গেট করা হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘চীনের সমর্থন ও সহযোগিতায় ২০২৫ সালের মধ্যে পাকিস্তানের বিদ্যুৎ সমস্যা পুরোপুরি মিটে যাবে। এর মানে হলো পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা দূর হবে।’
পাকিস্তান ও শ্রীলংকাসহ প্রতিবেশি দেশগুলোতে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে, চীনের ‘অঞ্চল ও সড়ক উদ্যোগ’র প্রতি নয়া দিল্লির নেতিবাচক মনোভাব বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করেছে বলে সম্প্রতি ব্লুমবার্গের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের বিরোধে চীন নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস আগে ভুটানের কাছে ত্রিদেশীয় সংযোগ স্থলে চীনে সঙ্গে ভারতের অচলাবস্থা দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে নিয়ে আসে।
আজাদ কাশ্মীরের প্রকল্প নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে এই প্রকল্প তার জলজ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তবে, ভারতের আশংকা ভিত্তিহীন উল্লেখ করে হু বলেন, ‘এই প্রকল্প ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এর সঙ্গে ভারতের নদীগুলোর কোনো সংযোগ নেই।’
হু আরো বলেন, ভারতেরও বিদ্যুৎ সংকট রয়েছে। তাই তারা চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে হিংসা করছে। তার মতে, ‘চীনা উদ্যোগের প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব পরিহার করা উচিত ভারতের। সহযোগিতার ব্যাপারে তারা উদার হলে তাদের বিদ্যুৎ সমস্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রেও চীন এগিয়ে যেতে পারে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন