ফাদার মারিনো রিগন আর নেই। রাত ১০টার দিকে ইতালির ভিচেঞ্চায় মারা গেছেন এ মুক্তিযোদ্ধা। দেশের প্রবাসী এ বন্ধু ছিলেন একাধারে দার্শনিক লেখক, অনুবাদক, মানবসেবক ও সমাজসেবক। তবে বাংলাদেশের জন্য তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি ছিলেন বাঙালি, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের পরমাত্মীয়।
ইতালি থেকে আবৃত্তিশিল্পী রবীশঙ্কর মৈত্রী তার মৃত্যুবরণের খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সময় রাত দশটার দিকে তিনি জীবনের মায়াত্যাগ করে চলে গেছেন।
ইতালির ভিচেঞ্ছা প্রদেশে ভিল্লাভেরলা গ্রামে ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। ১৯৫৩ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে তাঁর প্রথম আগমন। কর্মসূত্রে দেশের নানা অঞ্চল ঘুরে অবশেষে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন সুন্দরবন কাছে মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে।
ফাদার মারিনো রিগন বাংলাভাষা শিখতে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রেমে পড়েন গভীরভাবে। শরৎচন্দ্রের লেখা পড়েই বাংলাসাহিত্যে তাঁর প্রথম প্রবেশ; তারপর রবীন্দ্রসাহিত্যের সঙ্গে পরিচয়। পড়তে থাকেন রবীন্দ্র রচনাবলি। রবীন্দ্র-জীবনদর্শনে তিনি আপ্লুত-প্রাণিত-মুগ্ধ। লোকায়ত বাংলার চারণ দার্শনিক লালনের প্রতি তিনি গভীর কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। লালন-গান তাঁকে সাধনার নতুন পথ দেখায়। ইতালিয়ান ভাষায় তিনি অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিসহ চল্লিশ কাব্য, জসীমউদদীনের নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, নির্বাচিত কবিতা, লালনের তিনশো পঞ্চাশটি গান ছাড়াও বাংলাদেশের অসংখ্য কবিতা। তিনি ইতালীয় রূপকথা পিনোকিও অনুবাদ করেছেন বাংলাভাষায়।
ফাদার মারিনো রিগন মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধপীড়িত সাধারণ মানুষ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন দেশপ্রেমিক বাঙালির মতো।মানবসেবা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে প্রদান করেছে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব। এছাড়াও দেশে-বিদেশে বহুসংখ্যক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন; মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ২০১৪ সাল থেকে তিনি ইতালির ভিচেঞ্চায় বিশেষ যত্নে ছিলেন। কিন্তু তিরানব্বই বছর বয়সে জীবনের মায়া ত্যাগ করে অবশেষে চলে গেলেন এ মহান ব্যক্তিত্ব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন