চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেস ২৪ অক্টোবর শেষ হওয়ার পর একেবারে নিশ্চিতভাবে যে ঘটনাটি ঘটবে তাহলো: আরো শক্তিশালী নেতা হিসেবে আবির্ভুত হবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার ক্ষমতা আরো সুসংহত হবে। ক্ষমাসীন দলে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বডিগুলোতে তার পক্ষের লোকজনের হাত আরো শক্তিশালী হবে।
দু’মাসেরও কম সময় আগে ভারত ও চীনের সেনবাহিনী অতি সতর্কতার সঙ্গে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে যাওয়ায় দোকলাম সীমান্তে ৭০ দিনব্যাপী সামরিক অচলাবস্থার অবসান ঘটে। ওই অঞ্চলে চীন একটি সড়ক তৈরির উদ্যোগ নিলে ভুটান থেকে ভারতীয় সৈন্যরা গিয়ে তাতে বাধা দেয়। এতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ভারতের মতে ভুটান ও চীন দু’পক্ষই ভূখণ্ডটির দাবিদার। ভুটানের হয়ে ভারত সেখানে হস্তক্ষেপ করেছে বলে নয়া দিল্লি দাবি করে।
তবে শেষ পর্যন্ত চীন সড়ক নির্মাণ বন্ধ ও ভারত সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ায় অচলাবস্থা শেষ হয়। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন সড়ক নির্মাণে চীনের ওই বিরতি আসলে ছিলো কৌশলগত।
গত বুধবার (১৮ অক্টোবর) চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি অবশ্য প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপারে নমনীয় কৌশলের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
প্রেসিডেন্ট শি কমিউনিস্ট পার্টির ২,২০০ ডেলিগেটের সামনে তার কাজের রিপোর্ট তুলে ধরতে গিয়ে ‘বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুফল ও অন্তর্ভুক্তিমুলক নীতি এবং বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্ব জোরদারের নীতি অনুসরণের মাধ্যমে (চীনের) প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক’ গভীর করার পক্ষে কথা বলেন।
পর্যবেক্ষকরা অনেকটা নিশ্চিতভাবে বলছেন যে শি এবং তার নতুন টিমে’র পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে। আবার, একটি দৃঢ়চিত্ত ও উদীয়মান চীন ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে বলেও বিশ্বাস করছেন বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকরা।
২০১৪-১৬ মেয়াদে চীনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বপালনকারী এ কে কান্ত বলেন, ‘একটি অধিকতর সক্রিয় ও দৃঢ় চীন, যে দেশটি তার বলয় তৈরি করছে, যার নেতৃত্বের এই অঞ্চল ও এর বাইরে উচ্চাকাঙ্খা আছে তা স্বাভাবিকভাবেই (ভারতের জন্য) অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ বয়ে আনবে।’
বর্তমানে নয়া দিল্লির ইন্সটিটিউট অব চায়নিজ স্টাডিজ-এর প্রধান কান্ত আরো বলেন, ‘চীন এমন এক এশিয়া কামনা করে যেখানে তার প্রাধান্য থাকবে। এই বিষয়টি চীনের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র নীতির ব্যবস্থাপনা ও আমাদের পররাষ্ট্র নীতির অগ্রাধিকার ব্যবস্থাপনাকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।’
গত কয়েক বছর ধরে চীনা পররাষ্ট্র নীতির সাধারণ রূপটি অনেক বেশি জিদপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষাবিদ বলেন যে বেইজিং তার স্বার্থ হাসিল ও অন্যদের দাবি উপেক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ওই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগর বা ভুটান-যেখানেই হোক না কেন প্রতিপক্ষের দাবি উপেক্ষা করছে চীন। এই প্রবণতা ক্রমেই ঘোষিত নীতি হয়ে উঠছে। এই ধরনটি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি স্পষ্ট।’
এই প্রবণতা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও তিনি মনে করেন।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ও চীন বিশেষজ্ঞ লে. জেনারেল (অব:) এস এল নরসিমান বলেন, ‘শি ক্ষমতায় আসার পর তিনি ভারতের সঙ্গে উন্নততর সম্পর্কের ইংগিত দিয়েছিলেন। এর পাঁচ বছর বাদে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দক্ষিণ দিকে সরে গেছে। আরো শক্তিশালী শি’র মানে হলো এই প্রবণতা অব্যাহত থাবকে, যদি না মধ্যবর্তী সময়ে কোন সংশোধন আনা হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব গ্লোবাল পলিসি এন্ড স্ট্রাটেজি’র এসোসিয়েট প্রফেসর ভিক্টর শিহ’র মতে এই উদীয়মান দেশটিকে সামাল দিতে ভারতকে প্রস্তুতি নিতে হবে। গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর চীনা নেতা হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছেন শি।
শিহ বলেন, ‘যেকোন নেতাকেন্দ্রিক শাসনের জন্য, নেতার সিদ্ধান্তের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা হলো দলের মধ্যে এ ধরনের ক্ষমতাধর নেতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস খুব কম জনেরই থাকে।’
শিহ আরো বলেন, ‘তিনি (নেতা) নিজের প্রজ্ঞার ওপর বিশ্বাস করতে শুরু করবেন। চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সমস্যা হলো শি’র বক্তব্য থেকে মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রের মতো না হলেও বিশ্বব্যাপী কাছাকাছি ধরনের প্রভাব চীন কামনা করে। চীনের এই চাওয়া ঠিক আছে কিনা প্রতিবেশি দেশগুলোকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
print
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন