ইসরাইল কর্তৃক পশ্চিম তীরের কয়েকটি ফিলিস্তিনি মিডিয়া হাউজ বন্ধের পর অঞ্চলটিতে পুনরায় ইসরাইলি দখলদারিত্ব ফিরে আশার আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনিরা। গত সপ্তাহের শেষ দিকে রামাল্লাহ, নাবলুস, বেথলেহেম ও হেবরনে কয়েকটি মিডিয়া হাউজের কার্যালয় বন্ধ করে দেয় ইসরাইলি সেনারা।
১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর ইসরাইল পশ্চিম তীরের বেসামরিক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর তারা নিরাপত্তা দায়িত্ব প্রত্যাহার করে নেয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, পশ্চিম তীরে একটি ছায়া সরকার গঠন করছে ইসরাইল। ইসরাইলি সেনা সদর দফতরের সরকারি কর্মকাণ্ডের সমন্বয় দফতরের (সিওজিএটি) তত্ত্বাবধানে এই ছায়া সরকার গঠিত হচ্ছে। রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের দফতরের মাত্র এক মাইলেরও কম দূরত্বে এই বিভাগটির কার্যালয় অবস্থিত। পশ্চিম তীরের মিডিয়া হাউজগুলো বন্ধ করেছে এই সিওজিএটি। এই বিভাগটির ক্ষমতা রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেয়া যেকোনো অনুমোদন বাতিল করার। সিওজিএটির সমন্বয়কারী ইয়োভ মরদেশাই এই মিডিয়া হাউজগুলোকে ইসরাইলি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনেছেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ঘনিষ্ঠ একজন জানিয়েছেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে এমন একটি কর্তৃপক্ষতে পরিণত করেছে, যাদের কোনো ক্ষমতা নেই। ফিলিস্তিনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে জেরুসালেমের একটি মিলিটারি সেন্সরশিপ অফিস থেকে ইসরাইল পশ্চিম তীরের মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করত। প্রতিদিন সংবাদপত্র প্রকাশের আগে সেন্সর কর্মকর্তাদের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তবে অসলো চুক্তির পর এই বিষয়টি ফিলিস্তিনি সরকারের অধীনে চলে যায়। কিন্তু গত সপ্তাহে এই তিনটি মিডিয়া হাউজ বন্ধ করে দেয়ার পর ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমে নতুন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পশ্চিম তীরের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নতুন করে ও নতুন আঙ্গিকে ইসরাইলি সামরিক সেন্সরশিপ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পশ্চিমতীরে ইসরাইলের বসতি নির্মাণের নিন্দা জার্মানি ও ফ্রান্সের
এদিকে মিডল ইস্ট মনিটর জানায়, ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ইসরাইলের নতুন তিন হাজার বসতি নির্মাণের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে জার্মানি ও ফ্রান্স। ২০০২ সালের পর থেকে বসতি নির্মাণ শুরুর পর এই প্রথম ফ্রান্স নিন্দা জানাল।
ফ্রান্স ইসরাইলের সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফ্রান্স ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। তারা জানায় জাতিসঙ্ঘের কাউন্সিল রেজ্যুলেশন ২২৩৪ অনুযায়ী উপনিবেশকতা অবৈধ। তারা বলেন, চলতি বছরের শুরুতে এই বসতির মাত্রা অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে। এটা নেতিবাচক বার্তা দেয়।তেমনি পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতি নির্মাণ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে জার্মান সরকার।
বৃহস্পতিবার জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণ পরিকল্পনার নিন্দা জানানো হয়। ২০১৬ সালে ফ্রান্সই সর্বপ্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে জানায় যে ইসরাইলের বসতি নিষিদ্ধ করতে হবে। সে সময় তাদের সাথে কূটনৈতিক টানাপড়েনও শুরু হয় তাদের। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পশ্চিতীর ও জেরুসালেমসহ ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি সম্পূর্ণ অবৈধ। ১৯৬৭ সালের পর থেকে নির্মিত এই ইহুদি বসতিগুলোতে এখন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বসবাস করেন।
ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করা যাবে না : হামাস
প্রেস টিভি
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার বলেছেন, বিশ্বের কোনো শক্তি হামাসকে অস্ত্র ত্যাগে বা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করতে পারবে না। ফিলিস্তিনের সংহতি সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দেয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওই দুই শর্তারোপের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এ বক্তব্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্বের কেউ হামাসকে অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য করতে পারবে না। ফিলিস্তিনিদের রক্ষার কাজে হামাস নিজ ক্ষমতাকে লাগাবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলাল্ড ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক সংলাপবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি জ্যাসন গ্রিনব্ল্যাটের বক্তব্যের পর এ ঘোষণা দেন হামাস প্রধান। জ্যাসন বলেছিলেন, তার ভাষায়, যেকোনো ফিলিস্তিনি সরকারেরই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে।
এ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে বলে এর আগে অভিযোগ করেছেন হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা বাসসাম নাইম।
কাতার সঙ্কটের জন্য সৌদি জোটকে দুষলেন টিলারসন
আলজাজিরা
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে যে কূটনৈতিক সঙ্কট চলছে তা খুব শিগগিরই সমাধান হবে না বলে মনে করছেন তিনি। এই সঙ্কট সমাধানে কোনো ধরনের উন্নতি না হওয়ার পেছনে তিনি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকেই দায়ী করেছেন।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন টিলারসন। দেশগুলোর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা সঙ্ঘাত তৈরি হয়েছে তা সমাধানে মধ্যস্ততা করতে শুক্রবার সৌদি সফরে গেছেন টিলারসন। এই সফরের মাত্র এক দিন আগেই সৌদি জোটের বিপক্ষে সুর চড়ালেন তিনি।
ব্লুমবার্গকে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে মনে করছি না আমি। কিছু দেশ এ বিষয়ে সত্যিকার অর্থেই অনিচ্ছুক। তারা এই সঙ্কট সমাধানে যুক্ত হতে চায় না।
গত ৫ জুন তারিখে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সে সময়ই কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ ও অর্থ সহায়তা এবং ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ এনে দেশটির সাথে স্থল, আকাশপথ ও সাগরপথে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চার আরব দেশ। তবে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে দোহা।
গত ২২জুন আরব দেশগুলো কাতারের ওপর ১৩ দফা দাবি পেশ করে। আলজাজিরা বন্ধ, ইরানের সাথে সম্পর্ক সীমিত, তুর্কি সেনা ঘাঁটি প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু দাবি জানানো হয়।
কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে দোহা। কাতারের সাথে আরব দেশগুলোর প্রায় চার মাস ধরে এই অচলাবস্থা চলছে। কুয়েত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের পরেও এই অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। টিলারসনও এ বিষয়ে কথা বলতে জুলাই মাসে সৌদি আরবে সফর করেছেন।
টিলারসন বলেন, এটা চার আরব দেশের নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে। তিনি আরো বলেন, তাদেরকে একত্র করতে আমরা যেকোনো ধরনের কাজ করতে প্রস্তুত, কিন্তু এই ক্ষেত্রে এটা নেতৃত্ব দেয়া আরব দেশগুলোর ওপরই বেশি নির্ভরশীল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন