সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার পথে পা রাখলেন বাঙালির অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার মারিনো রিগন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ইতালির ভিচেঞ্চায় মৃত্যু হয় তার। বাংলাদেশে তার আগমন ১৯৫৩ সালের ৭ জানুয়ারি। বহুমাত্রিক তার পরিচয়। আর দশজন ধর্মযাজকের মতো কেবল ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকেননি তিনি। নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন শিল্প, সংস্কৃতি আর শিক্ষামূলক কাজে।
তার হাতেই ইতালিয়ান ভাষায় রচিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সাঁইয়ের ৩৫০টি গান, জসীম উদ্দীনের নকশি কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, নির্বাচিত কবিতা ছাড়াও এদেশের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের অসংখ্য কবিতা।
তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৭টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। সরকার এদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সৃজনশীল ও শিক্ষামূলক কাজে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করেছেন বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব।
মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার 'মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা'। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
কর্মসূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে অবশেষে তিনি স্থায়ীভাবে বাস করছিলেন সুন্দরবন সংলগ্ন মংলা শেলাবুনিয়া গ্রামে।
২০০৩ সাল। ফাদার রিগনের হৃদযন্ত্রের রোগ ধরা পড়ে। তিনি ভাবলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গেছেন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার স্বজনরা ইতালিতে যেতে বললেন। কিন্তু ফাদার কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। তার কথা, যদি মরণ হয়, বাংলার মাটিতেই হবে। প্রিয় বাংলার মাটিতেই চিরনিদ্রায় ঘুমাবেন তিনি। স্বজনদের প্রবল আকুতি-মিনতির পর তিনি রাজি হলেন ইতালি যেতে। তবে শর্ত ছিল, যদি মৃত্যু হয় মরদেহটি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। তার শেষ ইচ্ছ কি পূরণ হবে?
এ ব্যাপারে ফাদার রিগনের অত্যন্ত স্নেহভাজন হিসেবে পরিচিত কাব্য কামরুল তার ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন, দেশে থাকাকালীন নানা সাক্ষাৎকারে তিনি (ফাদার রিগন) বাংলাদেশের মাটিতেই সমাহিত হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক হলেই তার সমাধিটি তার প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশের মাটিতেই হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন