আজ একে হুঙ্কার, তো কাল ওকে হুমকি। শুধু কি তাই, প্রায় প্রতিদিনই নিত্যনতুন পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় মেতেছে উত্তর কোরিয়া। আর এই শক্তি পরীক্ষার জেরেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ। এমনটা অবশ্য দাবি করছে প্রতিবেশী দেশ চীন। তাদের দাবি, এতে বদলে যাচ্ছে পর্বতের ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তনও। আর তাতে শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের দেশও।
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রতি বারই পরমাণু পরীক্ষার জেরে ছোট-বড় ভূকম্পে কেঁপে উঠে উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন অংশ। সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয়েছিল পুনগেই-রি পরমাণু পরীক্ষার পর। গত ৪ সেপ্টেম্বর মাউন্ট মান্তাপের নিচে পরীক্ষাটি হয়। সেই দিন হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে মাটি। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছিল পাহাড়ে ধস নামার ছবি।
রিখটার স্কেলে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় চীনেও। এর পরেই পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বদলে গেছে ৭২০০ ফুট উঁচু মাউন্ট মান্তাপের অবস্থান। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন, ‘টায়ার্ড মাউন্টেন সিন্ড্রোম’। চীনা গবেষকদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে মাউন্ট মান্তাপ। তাদের দাবি, বিস্ফোরণের ফলে ভূগর্ভস্থ পাথরের বৈশিষ্ট্যের অদলবদল ঘটছে। চিড় ধরছে পাথরে।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসমোলজিস্ট পল রিচার্ডসের কথায়, ‘পৃথিবীর কিছু কিছু অংশ এমনিতেই ভূমিকম্প-প্রবণ। তার ওপর লাগাতার বিস্ফোরণে পরিস্থিতি আরও খারাপ।’তাদের আশঙ্কা, আরও ভয়াবহ ভূমিকম্পের সম্মুখীন হতে চলেছে কোরীয় উপদ্বীপ।
২০০৬ সালে মোট ৬টি পরমাণু পরীক্ষা করেছিল উত্তর কোরিয়া। সেগুলির প্রায় সব কটিই করা হয় মাউন্ট মান্তাপের সুড়ঙ্গে। ওই এলাকাটি বিখ্যাত ‘পুনগেই-রি নিউক্লিয়ার টেস্ট ফেসিলিটি’নামে। মাউন্ট মান্তাপের গতিবিধির ওপরে তাই কড়া নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলক্যানোলজির অধ্যাপক কলিন উইলসনের দাবি, বার বার এই ধরনের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা হতে থাকলে জেগে উঠতে পারে উত্তর কোরিয়া ও চীনের সীমান্ত থেকে মাত্র ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট পিকদুও। ১৯০৩ সালের পর থেকে ঘুমিয়ে রয়েছে সেটি।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একের পর এক পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে কিম-জং-উনের দেশ। বরাবরই তাদের পাশে থেকেছে চীন। আমেরিকা তাই চীনকে অনুরোধ করেছিল, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু কোনও দিনই সে পথে হাঁটেনি চীন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, নিজের ঘাড়ের ওপর পাহাড় ভেঙে পড়বে বলেই কি সরব হচ্ছে চীন?
poriborton
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন