যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের জন্য কল্যাণকর না হয়ে ক্ষতিকরই হবে। এশিয়া অঞ্চলে চীনের ‘কম দায়িত্বহীন’ উত্থানের প্রেক্ষাপটে নয়া দিল্লির সাথে ‘নাটকীয়ভাবে গভীরতর সম্পর্কের’ জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সাম্প্রতিক আহ্বানের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে রেডিও স্পুটনিককে এই মন্তব্য করেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনিস্টারের রাজনীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিবস আনন্দ।
আনন্দ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতর জোট গঠনের ফলে চীনের বিপরীতে মানসিকভাবে স্নায়ুযুদ্ধ ধরনের মানসিকতার ফাঁদে পড়ে যেতে পারে ভারত। ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে ভারত যতটা সুবিধা লাভ করার আশা করছে, হয়তো তা পাবে না।
ওই বিশ্লেষক বলেন, ভারতের মধ্যে এ নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। অনেকে চীনকেই সম্ভাব্য মিত্র বিবেচনা করে। তবে বেশির ভাগই চীনকে দেখে চ্যালেঞ্জার হিসেবে।
তবে দেশ দুটি পছন্দ করুক বা না করুক, তারা প্রতিবেশী হিসেবেই বিরাজ করবে। আর যুক্তরাষ্ট্র ‘তার নিজের স্বার্থে মিত্রকে ব্যবহার’ করে ‘আসবে এবং যাবে।’
ওই বিশ্লেষক উল্লেখ করেন, নয়া দিল্লির জন্য অনেক বেশি ভালো হতো, যদি তারা অন্যান্য দেশের প্রতি নিরপেক্ষতার নীতিতে অটল থাকত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আনন্দ বলেন, ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গাঁটছড়া বাঁধবে, তা অনিশ্চিত বিষয়।
তিনি বলেন, ভারতের উচিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য পরাশক্তির সাথে সমান দূরত্ব বজায় রাখা। সাধারণভাবে জোট নিরপেক্ষ হওয়াটা এখন খুবই ভালো অবস্থান।
অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি অব ইন্ডিয়ানার রাজনীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুমিত গাঙ্গুলি বলেন, মার্কিন-ভারত সহযোগিতায় দিল্লি লাভবান হবে।
তিনি বলেন, ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা স্বীকার করেছেন, চীনকে আটকানোর জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের জোট গড়ে ওঠছে।
চীনকে এই অঞ্চলের চ্যালেঞ্জার মনে করছে ভারত। উভয় দেশেরই বিতর্কিত সীমান্ত রয়েছে। এটা সঙ্ঘাতের উৎস।
তিনি বলেন, ভারত মনে করে, কেবল বিরোধপূর্ণ সীমান্তেই নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং সার্বিকভাবে এশিয়াতেও ভারতের স্বার্থের প্রতি চীন হুমকি সৃষ্টি করছে। আগের সরকার চীনের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে খুবই একটা লাভ হয়নি।
সম্প্রতি ভারত সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কেবল একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ভারতকে ব্যবহার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
টিলারসনের বিবৃতির ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দ্রেই ভোলোদিন এর আগে মন্তব্য করেছিলেন, দক্ষিণ চীন সাগর কিংবা পূর্ব চীন সাগরে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টিতে ভারত ‘খুব একটা প্রভাব’ ফেলতে পারবে না।
তিনি বলেন, চীন বেশ ভালোভাবেই জানে, যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থেই ভারতকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আর ভারতের নির্দিষ্ট কিছু মহল যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করতে চাইছে নিজের স্বার্থে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন