ব্যাংকক হাসপাতাল ঘুরে: ঢাকায় ডাক্তাররা অনেকে কথাই শুনতে চান না। এখানে সব বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনেছেন। শেষে উঠতে যাচ্ছিলাম জিজ্ঞাসা করলেন, আর কিছু জিজ্ঞাসা আছে? তখন বেশ অবাক হয়েছি!
ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন মোমিনুল ইসলামের এমন মূল্যায়ন হাসপাতালটি সম্পর্কে। বাংলাদেশ ও ভারতের বেশকিছু হাসপাতাল দেখেছেন তিনি। তার কাছে প্রশ্ন ছিলো, ঢাকা-দিল্লিসহ অনেক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন। ব্যাংককের সঙ্গে গুণগত পার্থক্য কেমন?
জবাবে মোমিনুল ইসলাম বলেন, ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিক সেবা মুগ্ধ হওয়ার মতো। বিশেষ করে নার্সদের সেবার কোনো তুলনা হয় না। অনেক দেশই নার্সিং পেশাকে মর্যাদার আসনে বসাতে না পারলেও থাইল্যান্ডে রাজকীয় পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ রাজমাতা এক সময় নার্স ছিলেন।
ব্যাংকক হাসপাতাল টেকনোলজিতেও অনন্য, থাইল্যান্ডের আর কোনো হাসপাতাল এতো আপডেট নয়। অনেকে যখন সেকেন্ড জেনারেশন মেশিন ব্যবহার করছে তখন ব্যাংকক হাসপাতাল ব্যবহার করছে ফোর জেনারেশন মেশিন। থাইল্যান্ডে আর কোথাও এই মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না, যোগ করেন মোমিনুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেশিন দিয়ে ৩৫টি পর্যন্ত রেডিয়াম থেরাপি দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংকক হাসপাতালের ফোরজি মেশিনে সর্বোচ্চ ১৫টি থেরাপিই যথেষ্ট। এতে একদিকে যেমন সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে ক্যান্সারের জীবাণুকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়।
ডা. শক্তিরঞ্জন পাল/ ছবি: ডিএইচ বাদলসিটি এনজিওগ্রামের জন্য অনেক হাসপাতাল এখনও ৬৪ স্লাইস মেশিন ব্যবহার করছে। আর ব্যাংকক হাসপাতাল ২৫৬ স্লাইস মেশিন ব্যবহার করছে। খুব শিগগিরই ৬২০ স্লাইস মেশিন যুক্ত করতে যাচ্ছে হাসপাতালটি। স্লাইস যতবেশি হবে তত রিডিং নির্ভুল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে স্লাইসগুলো যুক্ত করার সময় সংযোগস্থলে থেকে গেলে ক্যান্সারের জীবাণু চোখ এড়ানোর সুযোগ থাকে। সে কারণে স্লাইস যতবেশি তত সুবিধা বলে জানান ডাক্তার শক্তিরঞ্জন পাল।
অন্যরা ৬৪ স্লাইসে আটকে থাকলেও ব্যাংকক হাসপাতাল এমন অত্যাধুনিক মেশিন স্থাপন করেছে দুটি। যাতে রোগীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা যায়। থাইল্যান্ডের অনেক হাসপাতাল এখন তাদের রোগীদের বিভিন্ন টেস্টের জন্য ব্যাংকক হাসপাতালের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।
কার্ডিয়াক এমআরআই হার্ট ইভালুয়েশন ৩.৫ টিসলা যুক্ত করেছে। যা থাইল্যান্ডে আর কোথাও নেই। হাইব্রিড ওটি কমপ্লিকেটেড সার্জারি ভেরিয়ান ইডিজিই, ও-আর্ম স্পেইন সার্জারি, ওপেন এমআরআই ১ টিসলা সহ অনেক প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি যুক্ত করেছে থাইল্যান্ডের প্রথম বেসরকারি হাসপাতালটি।
যখন ব্যাংক হাসপাতাল রেডিওথেরাপি অ্যাডভান্সমেন্ট ইডিজিই প্লাস লায়নাক-১ ও ২ ব্যবহার করছে তখন হাঁকডাকওয়ালা বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল ব্যবহার করছে লায়নাক-২। এ রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ দেওয়া যাবে বলে জানালেন ব্যাংকক হাসপাতালের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডেপুটি হেড অব ডিপার্টমেন্ট ফয়সাল আনোয়ার প্রতীক।
ব্যাংকক হাসপাতালতিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আধুনিক চিকিৎসা দিতে। রোগীদের আস্থা বেড়েছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে সেবা ও যন্ত্রপাতির মান। বিশ্বের তাবত উন্নত প্রযুক্তি সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। প্রযুক্তির দিক থেকে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছি।
আনোয়ার প্রতীক আরও বলেন, আমাদের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো একমাত্র আমরাই মানবদেহের অঙ্গগুলোকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়াস নিয়েছি। অর্থপেডিক বিভাগকে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করা হয়েছে। কেউ হয়তো শুধুই হাঁটু দেখছেন। কেউ পায়ের গোড়ালি। কেউ আবার মেরুদণ্ড। আরেকজন হয়তো কলারের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠছেন। ক্ষুদ্র পরিসরে মনোযোগ দেওয়াতে ডাক্তাররা আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠছেন এখানে।
ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা এই অঞ্চলের মধ্যে শুধুমাত্র ব্যাংকক হাসপাতালকে সার্টিফায়েড করেছে। মান অনুযায়ী প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিশ্চিত করার পর ফিফা সনদ দিয়ে থাকে। ভেতরের যন্ত্রপাতি চোখ ধাঁধানো। কী আছে না বলে কী নেই বলাই শ্রেয়। বিশ্বের অনেক নামিদামি ফুটবলার এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, বলেন ফয়সাল আনোয়ার প্রতীক।
ওবি-গাইনি বিভাগও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। এখানে টেস্টটিউব বেবি সহ নিঃসন্তান দম্পতির সকল অত্যাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এমনকি যাদের একাধিক ছেলে রয়েছে মেয়ে নিতে চান অথবা একাধিক মেয়ে রয়েছে ছেলে নিতে চান, তাদের জন্য দারুণ খবর দিয়েছে ব্যাংকক হাসপাতাল।
ক্রোমজম পরিবর্তন করে আগে থেকেই ছেলে অথবা মেয়ে নিশ্চিত করা হয়। সে ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের কিছু আইন অনুসরণ করতে হয়। বিশেষ করে দম্পতির আগের দুটি সন্তান থাকতে হবে, বয়স পঁয়ত্রিশের বেশি হতে হবে। তবেই কেবল ক্রোমজম পরিবর্তন করে ছেলে-মেয়ে আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয় বলে জানান ডাক্তার পাপাকন।
আলাপকালে পাপাকন বলেন, সন্তানধারণের ক্ষেত্রে দম্পতির বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে নিঃসন্তান দম্পতির সন্তানধারণের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। বিষয়টি হাস্যকর ও প্রতারণামূলক। বয়স ভেদে চান্স চল্লিশ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমাদের অনেক আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে আমরা সমস্যা চিহ্নিত করতে পারি। সে কারণে আমাদের সফলতার হার অনেক বেশি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন