জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়াই সৌদি আরব ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত রাখায় দেশটির ১২ সহস্রাধিক নিরপরাধ, নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষ মারা গেছে। ইয়েমেনে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মানসুর আব্দেল হাদি পালিয়ে রিয়াদে আশ্রয় নিয়েছেন। তাকেই পুনরায় ইয়েমেনে ক্ষমতায় বসাতে সৌদি সরকারের আগ্রাসনে খ্যাদ্যাভাব ও কলেরায় লাখ লাখ মানুষ ইয়েমেনে আক্রান্ত হওয়ার পর দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় শুরু হলেও পশ্চিম দেশগুলো শুধু নিরবই থাকেনি, দেশটির ওপর আগ্রাসন অব্যাহত রাখতে অস্ত্র সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরবকে। এমন প্রেক্ষাপটে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা যখন প্রতিরোধ গড়ে তুলছে তখন তাদের সন্ত্রাসী অভিহিত করে তাদের অন্তত ৪০ জনকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১ বিলিয়নের বেশি দিরহাম পুরস্কার ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। মার্কিন ডলারে এর অর্থমূল্য হচ্ছে ৪৪০ মিলিয়ন ডলার।
ইয়েমেনে আগ্রাসন চালিয়ে সৌদি আরব দেশটি পুরোপুরি দখল করে নেয়নি। রীতিমত প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে। সৌদি সেনারা ইয়েমেনের অভ্যন্তরে ঢুকে যে সশস্ত্র আক্রমণ চালাচ্ছে তার কোনো আন্তর্জাতিক অনুমোদন নেই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো একাধিকবার এধরনের আগ্রসনের নিন্দা জানিয়ে আসছে। মুসলিম বিশ্বের অভিভাবক হয়ে পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম পরিচয় দিয়ে সৌদি বাদশাহ আরেক মুসলিম দেশে পছন্দের সরকার বসাতে আলোচনার প্রয়োজনটুকুর ধার ধরেননি। আরেক দেশের মানুষকে সন্ত্রাসী অভিহিত করে তাদের ধরিয়ে দিতে বিলিয়ন দিরহামের পুরস্কার ঘোষণা করে কি সৌদি বাদশাহ ইয়েমেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছেন না? এনিয়ে জাতিসংঘ নিন্দা জানালেও ওআইসি কিছুই বলেনি। ইয়েমেনের হুতিরা যদি সন্ত্রাস করে থাকে তাহলে বাদশাহ তা জাতিসংঘ বা কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলছেন না কেন? ইন্টারপোলের সহায়তা নিচ্ছেন না কেন? আন্তর্জাতিক কোনো আদালতেও শরণাপন্ন হচ্ছেন না কেন? বিবিধ এধরনের প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই গণতন্ত্রের সোলকান্ট্রি বা পরাশক্তি দেশগুলোর। কারণ স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইসরায়েল সহ মিত্র দেশগুলোর উস্কানি ও সমর্থনেই সৌদি আরব এতদিন সিরিয়ায় যা করেছে, বাহরাইন, ইয়েমেন, মিসর সহ বিভিন্ন প্রতিবেশি দেশগুলোতে রাজতন্ত্র, সামরিক স্বৈরাচার বা পছন্দের সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পরিস্কার সন্ত্রাস ও আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
ইয়েমেনের এক হুতি নেতা আব্দুলমালিক বদর আলদিন আল হুতির মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এধরনের ৪০ জন হুতি নেতার নাম ঘোষণা দিয়ে সৌদি সরকার বিলিয়ন দিরহাম পুরস্কার দেবার কথা বলেছে। আর এসব করা হচ্ছে সন্ত্রাস দমনের নামে। তাহলে ইয়েমেনের নিরীহ মানুষগুলো সৌদি বোমারু বিমানের হামলায় যে মারা যাচ্ছে তা কি সন্ত্রাস নয়!
ইয়েমেনে হুতিরা তাদের দেশে কি করছে না করছে, কোন মতাদর্শ তারা অনুসরণ করছে তা নিয়ন্ত্রণে সৌদি আরবের এত আগ্রহ কেন? হুতিরা নিজ দেশকে সৌদি সামরিক আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে আঙ্গুল চুষবে নাকি অন্যকোনো দেশের সাহায্য নেবে তা কি তাদেরকে বলে দিতে হবে?
যেসব হুতি নেতাদের ধরিয়ে দিতে সৌদি সরকার ২০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে তারা হলেন, সালেহ আলী আল-সামাদ, মোহাম্মদ আলী আব্দুলকারিম আল হুতি, জাকারিয়া ইয়াহিয়া আল শামি, আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া আল হাকিম, আব্দুখালিক বদর আলদাইন আল হুতি, মোহাম্মদ নাসের আল আতিফি, ইউসেফ আহসান ইসমাইল আল-মাদানি, আব্দুলকাদের আহমাদ কাশেম আল-শামি, আবদুরাব সালেহ জারফান ও ইয়াহিয়া মোহাম্মেদ আল শামি। এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো সন্ত্রাসের অভিযোগ সৌদি আরব প্রকাশ করেনি।
১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে হুতি নেতা আব্দুলকারিম আম্মার আলদাইন আল-হুতিকে ধরিয়ে দিতে পারলে। আর যে সব হুতি নেতাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, ইয়াহিয়া বদর আলদাইন আল হুতি, হাসান মোহাম্মেদ জায়েদ, সাফার মুঘদি আল সোফি, মোহাম্মদ আব্দুলকারিম আল-ঘুমারি, আব্দুলরাজাক মোহাম্মেদ আল-মারোউনি, আমের আলী আল মারানি, ইব্রাহিম আলী আল-শামি, ফাদল মোহাম্মাদ মোতা, মোহসিন সালি আলহামজি, আহমাদ সালি হিন্দি দাগসান ও ইয়োসিফ আব্দুল্লাহ হোসেইন আলফাইশি।
খালিজ টাইমে প্রকাশিত এসব নামের তালিকায় আরো দেখা যায় যাদের ধরিয়ে দিতে পারলে সৌদি আরব ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা হচ্ছেন, হোসেইন হোমুদ আলা’জি, আহমাদ মোহাম্মাদ ইয়াহিয়া হামিদ, তালাল আব্দুলকারিম আ’কলান, আব্দুলিলাহ মোহাম্মাদ হাজার, ফারিস মোহাম্মাদ হাসান মানা’য়া, আহমাদ আব্দুল্লাহ আকাবাত, আব্দুললাতিফ হোমুদ আলমাহদি, আব্দুলহাকিম হাশিম আলখিওয়ানি, আব্দুলহাফিদ মোহাম্মাদ আলসাখাফ, মোবারাক আলমাশহান আলজায়েদি, আলী সাইদ আলরাজামি, সালি মোসফির আলশায়ের, আলী হোমুদ আলমোশাকি, মোহাম্মাদ শারাফালদিন, দায়েফ-আল্লা কাশিম আলশামি, আবু আলী আলখালানি ও আলী নাসির কারসাহ।
ইয়েমেনে হুতি নেতাদের সন্ত্রাসী অভিহিত করে পুরস্কার ঘোষণা করলেও বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এর আগে কোনো সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেনি সৌদি আরব। তা আল-কায়েদা, তালেবান বা আইএস জঙ্গি যেই হোক না কেন। তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন সহ যেসব মিত্র দেশ রয়েছে সেসব দেশে সৌদি আরব সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পারলে মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করবে কি না তা এখনো পরিস্কার নয় আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন