পাকিস্তান নৌবাহিনীর বিমান শাখায় চার-ইঞ্জিন বিশিষ্ট টার্বোপ্রব সাবমেরিন বিধ্বংসী ও সামুদ্রিক নজরদারি বিমান ‘লকহিড পি-৩ অরিয়ন’-এর উপস্থিতি প্রতিবেশি ভারতের নৌবাহিনীকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে।
সম্প্রতি ভারতীয় নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরে জাপানের সঙ্গে সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধের মহড়া চালায়। পাকিস্তানের প্রধান সাবমেরিন বিধ্বংসী বিমানের ক্ষমতা যাচাই করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী ওই মহড়া চালায় বলে সম্প্রতি দেশটির প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভারতের জন্য এই যুদ্ধমহড়া ছিলো বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এই মহড়া নৌবহিনীকে পি-৩ বিমানের কার্যকারিতা মূল্যায়নের সুযোগ করে দেয়। পাকিস্তান নৌবাহিনী তার প্রাইমারি এন্টি-সাবমেরিন প্লাটফর্ম হিসেবে বহু দশক ধরে পি-৩ এয়ারক্রাফট ব্যবহার করছে।’
ভারতীয় নৌবাহিনী জানায়, জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ মহড়া তাদের জন্য পি-৩সি বিমানের কার্যকারিতা পরীক্ষায় সহায়ক হবে, যা পাকিস্তানও ব্যবহার করছে।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর বিমান শাখায় ১৯৯৬ সালে প্রথম পি-৩সি বিমান যুক্ত করা হয়। দূরপাল্লার এই সামুদ্রিক টহল বিমান (এলআরএমপিএ) যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে লাভ করে দেশটি।
উন্নত সেন্সর ও অস্ত্র সজ্জিত পি-৩সি বিমান আরব সাগরে বিচরণকারী ভারতীয় নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।
গতবছর, এই বিমানের নজরদারির কারণে পাকিস্তানের জলসীমায় ভারতীয় সাবমেরিনের অনুপ্রবেশ রোধ করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান নৌবাহিনী।
নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত পি-৩সি বিমান পাকিস্তানের পানিসীমার দক্ষিণ অংশে ভারতীয় সাবমেরিনের উপস্থিতি সনাক্ত করে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান নৌবাহিনী পুরো অঞ্চলের ওপর নজরজারির জন্য পি-৩সি বিমান ব্যবহার করছে। এর মধ্যে তার বিশেষ অর্থনৈতিক জোনও অন্তর্ভুক্ত।
পি-৩সি হলো সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধ (এএসডব্লিউ)’র উপযোগী একটি স্থলভিত্তিক দূরপাল্লার টহল বিমান। শত্রুপক্ষের সাবমেরিন ও বিমান ধ্বংসের ক্ষমতা রয়েছে এর।
দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধিতে পাকিস্তানের উদ্বেগ
ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্রের আমদানী বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। এই অস্থিতিশীল অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে আঞ্চলিক ভারসাম্য বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করে দেশটি।
জেনেভায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক সিকিউরিটি কমিটির সভায় বক্তব্যকালে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি ফারুক আমিল এই উদ্বেগের কথা জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে একটি বিপজ্জনক প্রবণতার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি রাষ্ট্র সামরিক ব্যয়ে অন্য সবার চেয়ে যোজন-যোজন দূরত্বে এগিয়ে থাকতে চায়।
আমিল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সে এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করতে চায় না।
গত রবিবার ভারতের গণমাধ্যম জানায়, ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত যে অস্ত্রসজ্জিত ড্রোন চেয়েছিলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা ‘বিবেচনা করছেন’।
চলতি বছরের প্রথম দিকে, জেনারেল অটোমিক্স প্রেডেটর সি অ্যাভেঞ্জার বিমানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অনুরোধ করেছিল ভারত। ভারতে আইএএফ এর ৮০-১০০ ইউনিট অ্যাভেঞ্জার বিমানের চাহিদা আছে, যার জন্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করতে হবে।
গত ২৬ জুন হোয়াইট হাউসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হয়। এর কয়েক মাস পর ওই ‘বিবেচনার’ কথা জানালো ট্রাম্প প্রশাসন। ওই বৈঠকের সময়ও ভারতের কাছে মানব-বিহীন গার্ডিয়ান ড্রোন বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় নৌবাহিনীর কৌশলগত নজরদারির ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে ভারতের গুরুত্ব অনুধাবন এবং তাদের আগ্রহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামুদ্রিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে গার্ডিয়ান ইউএভিসহ ভারতের জন্য একটি প্রতিরক্ষা মেন্যুর প্রস্তাব দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ভারত সফরের আগে টিলারসন বলেছিলেন, ‘বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা পালনের জন্য ভারতকে শ্রদ্ধা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করতে সহয়তার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
এসময় তিনি অস্ত্রসজ্জিত ড্রোনের কথা উল্লেখ না করলেও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা মেন্যুতে রয়েছে গার্ডিয়ান ইউএএভি, বিমান ক্যারিয়ার টেকনোলজি, ফিউচার ভারটিকাল লিফ্ট প্রোগ্রাম এবং এফ-১৮ ও এফ-১৬ জঙ্গী বিমান।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন