হঠাৎ করে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে রবিবার সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। দেশটি বর্তমানে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খবর এএফপি’র।
ক্যাথলিক ধর্মযাজক ফাদার ফিদেলিস মুকোনরির উদ্ধৃতি দিয় জেডবিসি সম্প্রচার কেন্দ্র বলছে, প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে সেনাপ্রধানের সাথে রবিবার বিকেলে বৈঠকে করবেন। উল্লেখ্য বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ধর্মযাজক ফাদার ফিডেলিস মুকোনরি।
জিম্বাবুয়েতে গত কয়েকদিন ধরেই ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। গত মঙ্গলবার রাজধানী হারারের কাছাকাছি সাঁজোয়া যানের উপস্থিতি দেখে ব্যাপক আশঙ্কা তৈরি হয়।
মুগাবের অবস্থান এবং ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পাওয়া দেশটির ক্ষমতা এখন কার হাতে এসব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
সম্প্রতি দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কন্সটানটিনো চিওয়েঙ্গা ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাগাওয়া সহ দলের সিনিয়র নেতাদের বহিস্কার করার বিষয়টি বন্ধের জন্যে মুগাবের প্রতি দাবি জানান।
এরপরই মুগাবে’র দল সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ করেন। এর সপ্তাহখানেক আগে মুগাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাগাওয়াকে বরখাস্ত করেন।
দলীয় প্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত হচ্ছেন রবার্ট মুগাবে
জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির প্রধান হিসেবে রবার্ট মুগাবেকে বরখাস্ত করতে একটি বিশেষ বৈঠকে বসছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
দৃশ্যত সামরিক অভ্যুত্থানের চার দিন পর রবিবার দলটির পক্ষ থেকে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
জানু-পিএফ এর বিশেষ এই সভায় কেন্দ্রীয় কমিটি ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
এছাড়াও, জানু-পিএফ মুগাবের স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকেও অপসারণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। গ্রেস মুগাবে দলটির মহিলা লীগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্ষমতাচ্যূত এমমারসন মংনগাভাকে দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্বহাল করা হবে বলে দলটির নেতারা রয়টার্সকে জানান।
এছাড়াও, রবিবার দেশটির সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে মুগাবের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী ‘জেডটিভি’ এই তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তারা জিম্বাবুয়েতে একটি ‘নতুন যুগের’ জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, বোতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট ইয়ান খামা বলেছেন যে এই অঞ্চলে মুগাবের কোনো ধরনের কূটনৈতিক সমর্থন নেই এবং এখনই তার পদত্যাগ করা উচিৎ।
এর আগে, মুগাবের ভাতিজা জোর গলায় জানান যে তার চাচা এবং তার স্ত্রী গ্রেসকে ‘দেশের জন্য মরতে প্রস্তুত আছেন’ এবং তার পদত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গোপন অবস্থান থেকে মুগাবের ভাতিজা প্যাট্রিক ঝুওয়াও রয়টার্সকে জানান, বুধবার সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে তার চাচা কদাচিৎ ঘুমাতে পেরেছেন।
তিনি আরো জানান, মুগাবের স্বাস্থ্যের অবস্থা ‘ভাল’ আছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করার বিষয়টি বৈধতা পাবে না বলেও তিনি জানান।
এদিকে, মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে হারারে ও বুলায়ের রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে এসেছেন।
বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আকঁড়ে থাকা মুগাবেকে এবার সরে যেতে হবে। বিভিন্ন পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের স্থানীয় সংবাদদাতার বরাত দিয়ে জানায়, আন্দোলনকারীরা সেনা সদস্যদের জড়িয়ে ধরে উল্লাস করছেন। এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মুগাবের আর ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ নেই। এমনকি দেশটির সাবেক সেনা সদস্যরাও মনে করছে মুগাবের পদত্যাগ করা উচিত। যদিও গত বছরও তারা মুগাবের পক্ষে ছিলেন।
মিছিলে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি জানান, জিম্বাবুয়ের নাগরিক হিসেবে এমন শান্তিপূর্ণ হস্তক্ষেপের জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন মুগাবেকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। আমরা তার আবার ফিরে আসা দেখতে চাই না। আমাদের কাছে এটা একনায়কতন্ত্র শাসনের অবসান। এখন আমরা আমাদের জিম্বাবুয়ে ফিরে পেতে যাচ্ছি।
মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে মিছিলে তার নিজের ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ দল ও সেনাবাহিনীর সমর্থন রয়েছে। লন্ডনে জানু-পিএফ দলের প্রতিনিধি নিক মাংগওয়ানা বিসিসি রেডিও ফোরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মুগাবের বাড়ির সামনে তার দলের আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছে। তারা পদত্যাগপত্র ছাড়া সেখান থেকে যাবে না। এটা ২০ মিনিটেই সম্ভব ছিল। লোকজন আসবে, তিনি পদত্যাগ করবেন আর মানুষ চলে যাবে। ঘটনা শেষ।’
এর আগে গত বুধবার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রেসিডেন্ট মুগাবে গৃহবন্দি ছিলেন। এরপর শুক্রবার তাকে প্রথম জনসম্মুখে দেখা যায়। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যালেন্সর হিসেবে সমাবর্তনে বক্তব্য দেন। এ সময় তার স্ত্রী গ্রেস উপস্থিত ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার জানা গেছে, তিনি মুগাবের সঙ্গে তার বাড়িতেই আছেন।
দেশটিতে প্রেসিডেন্ট মুগাবের উত্তরাধিকারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে সেনাবাহিনী এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্ত্রী গ্রেসের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে মুগাবে গত সপ্তাহে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানগাগওয়াকে বহিষ্কার করেন।
১৯৮০ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মুগাবে দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন