মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এই প্রথমবারের মতো মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘এথনিক ক্লিনসিং’ বা জাতিগত নিধন বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি আরো বলেছেন, এর ফলে রোহিঙ্গারা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং সে কারণেই এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্টভাবে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বিবেচনা করছে।খবর বিবিসির।
গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেইনও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ এনেছিলেন।
রেক্স টিলারসন এমন একটা সময়ে এ মন্তব্য করলেন, যখন তার দিনকয়েকের মধ্যেই খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ মায়ানমার সফরে যাচ্ছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের হাতে যা তথ্য এসেছে তা খতিয়ে দেখে ও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে উত্তর রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটা জাতিগত নিধনযজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই নয়।’
মার্কিন সেনেটন জেফ মার্কলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল খুব সম্প্রতি মায়ানমার ও তার প্রতিবেশী বাংলাদেশে সফর করে ফিরে এসেছেন।
ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বলেছেন, তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-হত্যা-খুন-ধর্ষণের যে সব ঘটনা শুনেছেন তা তাদের গভীরভাবে বিচলিত করেছে। পোপ ফ্রান্সিসও আগামী ২৬ নভেম্বর মায়ানমারে আসবেন বলে কথা রয়েছে।
ভ্যাটিকান জানিয়েছে, পোপ ওই সফরে মায়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং লেইং ও সে দেশের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি-র সঙ্গে বৈঠক করবেন।
মিয়ানমারে মুসলিম নিধন: সু চির নীরবতায় কড়া সমালোচনা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিমদের রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বলছে। পুড়ছে মানবতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক মুসলিম।
নিজ দেশের সেনাদের দ্বারা এমন বর্বতা দেখেও নির্বিকার বিশ্ব শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি।
মিয়ানমার বরাবর দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এসব ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
শাসনের কাছে থেকে কালেভদ্রে এমন আশ্বাস মিললেও সূ চি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এখনো চুপ। মিয়ানমারের এই সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশও চিন্তায় আছে। সীমান্ত পেরিয়ে অনেক রোহিঙ্গা উপকূলীয় অঞ্চলে অনুপ্রেবেশ করছে।
সর্বশেষ অক্টোবরের দিকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় হামলার মাত্রা বাড়তে থাকে। যা এখনো চলমান।
সিএনএনের নিবন্ধে বলা হয়েছে, আরাকান, বর্তমানে যাকে রাখাইন প্রদেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বরাবরই বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ আবাসভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল এই অঞ্চলটি।
শত শত বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখানে বাস করছে। তাদের পূর্বপুরুষরা আরব, পার্সি ও মুরিস বণিক, যারা দশম থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে আরাকানে এসেছিল। তাদের অনেকে স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে দেশটিতে থেকে গিয়েছিল।
কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন ক্ষমতা দখল করার পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। দেশজুড়ে চলতে থাকে সামরিক শাসকদের স্বৈরশাসন।
গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ১৯৮২ সালে গৃহীত নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের দেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের ওপর নির্যাতন করাটা নিয়মিত ব্যাপারেও পরিণত হয়।
বিশ্বনেতারা ধারণা করছিলেন, সু চির দল ক্ষমতায় গেলে এই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু তিনি সবাইকে অবাক করে ‘নিশ্চুপ রাজার রূপকথা’ শুনিয়ে যাচ্ছেন।
তবে তার এই রূপকথার ইতি টানতে উঠেপড়ে লেগেছে ইন্দোনেশিয়ার একটি সামাজিক সংগঠন। তারা সু চির নোবেল বাতিলের দাবিতে গণপিটিশনের ডাক দিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন