প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গের শ্রীলঙ্কা সরকার আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট হারাতে পারে বলে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ওই নির্বাচনে ওই সম্প্রদায়ের ১০ ভাগ ভোট অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। রাজধানী কলম্বোর দক্ষিণের শরহ গিনতোতা শহরে গত সপ্তাহে ছয় দিন ধরে চলা সঙ্ঘাতের প্রেক্ষাপটে এই আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
ওই দাঙ্গায় মুসলমানদের বেশ কিছু দোকানপাট ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত এবং অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। ২০১৪ সালে পাশ্ববর্তী আলুথগামা শহরের দাঙ্গার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে এবারের দাঙ্গা। ওই দাঙ্গার জের ধরে ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসার পতন ঘটে। ওই সময় মুসলিম ও তামিল সংখ্যালঘুরা তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।
আলুথগামার দাঙ্গার মতো এবারো কারফিউর সময় পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে ওইবারের দাঙ্গার খবর সামাজিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু এবার গ্রেপ্তারের ভয়ে খবর চেপে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রী সাগালা রানায়াকে দাঙ্গার খবর প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি দাঙ্গাকে ‘সামান্য ঝগড়া’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গেও।
মানবাধিকার কর্মী আবদুল সুরুর ওই দাঙ্গার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, এক মুসলিম নারী এবং তার দেড় বছরের সন্তানকে এক মদ্যপ সিংহলা মোটরসাইকেল চালক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর মোটরসাইকেল আরোহী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একদল মুসলিম তাকে ধরে ফেলে। তারা তাকে পিটিয়ে ছেড়ে দিলেও মোটরসাইকেলটি রেখে দেয়। পরদিন কিছু মুসলিম যুবক গিনতোতা জিহারা (মুসলিম) কলেজে একটি ফুটবল ম্যাচ দেখতে গেলে সেখানে ওই মোটরসাইকেল আরোহীর জড় করা কিছু সিনহলা তাদের ওপর হামলা চালায়।
এই ঘটনার পর সেখানে পুলিশ ও বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। মনে হচ্ছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কিন্তু ২৭ নভেম্বর পুলিশ সুরক্ষা সরিয়ে নিলে সিংহলা লোকজন গিগতোতা বৌদ্ধ মন্দিরে সমবেত হয়ে মুসলিমদের ওপর হামলা চালায়। তারা ৯০টি মুসলিম বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় চার মুসলিম আহত হন।
সুরুর বলেন, ১৭ নভেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত সহিংসতা দমনের জন্য পুলিশ কিছুই করেনি। ১৮ নভেম্বর কারফিউ চলাকালেই একটি মুসলিম বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়, একটি আঁশ কারখানা পুড়িয়ে দেয়া হয়। সুরুরের মতে, এখন পর্যন্ত উত্তেজনা রয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন