হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। অনেক পরিচয় তাঁর। সাবেক মার্কিন ফাস্টলেডি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। যুক্তরাষ্ট্রের স্মরণকালের ইতিহাসে এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। সর্বশেষ গত বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়েন তিনি। পপুলার ভোটে অনেক এগিয়ে থাকলেও হেরেছেন নির্বাচনে। সম্প্রতি প্রকাশিত হিলারি ক্লিনটনের লেখা ‘হোয়াট হ্যাপেনড’ বইতে উঠে এসেছে নির্বাচনে পরাজয় ও এর পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর মতামত ও উপলব্ধি। বইটির চুম্বক কিছু অংশের অনুবাদ দেওয়া হলো বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য:
ট্রাম্পের সমর্থন, কী ব্যাখ্যা করে?
অবশেষে সেই হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি। বাইরে থেকে নির্বাচনে সব হস্তক্ষেপ একদম শেষ দিনে ভোটগুলো ট্রাম্পের দিকে নিয়ে গেছে। এর তেমন কোনো ব্যাখ্যা ছিল না। শেষ সময়ে ওই রাজ্যগুলোতে ভোট যেভাবে পাল্টে গেল, তাতেই পুরো পরিস্থিতিই পাল্টে গেছে। ৬২ শতাংশ লোক, যারা ট্রাম্পকে যোগ্য মনে করতো না, তারা কীভাবে তাঁকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে ফেলল? কোথাও ব্যাখ্যা নেই এর। বর্তমানে আমাদের দেশে কী যে চলছে, সেটা বোঝাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
এক কোটি ৩৩ লাখ রিপাবলিকানরা প্রাথমিক ভাবে ট্রাম্পকে নির্বাচিত করে। নিসন্দেহে এটা বিশাল। এটা আমার অবাক লাগে। আপাতদৃষ্টিতে অযোগ্য একজন লোককে নির্বাচন করা যিনি বলেছেন, ‘আমি ফিফথ অ্যাভিনিউ এর মাঝখানে দাড়িয়ে যদি কাউকে গুলিও করি, তাও আমার ভোটার সংখ্যা কমবে না।’
ভোটারদের আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছাড়াও ট্রাম্পের প্রতি সমর্থকদের জোর করে চাপিয়ে দেওয়াটাও একটা বড় কারণ ছিল। ডেমোক্রেটিক ভোটের ৮৯ শতাংশ আমি জিতি। আর ট্রাম্প রিপাবলিকান ভোটের ৯০ শতাংশ জেতে। ভোটাররা শুরুতে হয়তো আলাদা প্রার্থী চেয়েছিল। আবার তারা ট্রাম্পের অসংযত ব্যবহারে বিরক্তও ছিল। তারঁ বর্ণবাদ বৈষম্য, নারীদের প্রতি অশ্রদ্ধা- সবমিলিয়ে ট্রাম্প কীভাবে জিতে গেল!
পক্ষপাতিত্ব বেশ শক্তিশালী। ট্রাম্পের সমর্থনের এটিই মূল কারণ নয়। আসলে পরিবর্তন একেকজনের কাছে একেক রকম হয়। আমি যেটা দেখলাম, আমার এই ভোটের যুদ্ধটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল শুরু থেকে। পুরো প্রচারণা জুড়ে বিভিন্ন পোলে প্রশ্ন করা হয় যে তারা ওবামাকে নিয়ে কী ভাবছে এবং তারা কী তার সেই ধারাই অবলম্বন করবে নাকি মত পাল্টাবে। এতে জানা যায় যে, তারা ওবামার জনপ্রিয়তাকে শীর্ষ তুলে রেখেছেন। এবং প্রয়োজনে তারা নতুন প্রার্থী দেখতেও প্রস্তুত। আর এই পরিবর্তনের ইচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর ভেতরের বিষয়গুলো দেখাও বেশ জরুরি।
অর্থনৈতিক উদ্বেগ, গোঁড়ামি
দুটো প্রতিদ্বন্দ্বিতার তত্ত্ব যাচাই করে দেখা গেছে হয়তো এটি অর্থনৈতিক উদ্বেগ বা গোড়ামি ছিল। ২০১৬ এর নির্বাচনের ধারণাটি পুরোই অর্থনৈতিক অসোন্তষের মুখে ছিল। এক্ষেত্রে ধারণাটি ছিল যে শ্রমিক শ্রেণির জননেতা। আর আমি সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর নেতা। ভোটার শ্রেণির বিশ্লেষণেও তা দেখা যায়। দেখা গেছে, বেশ কিছু বামপন্থী ভোটার ট্রাম্পের পক্ষে থাকার ঘোষণা দেয়। গ্রিন পার্টির নেতা জেল স্টেইন আমাকে আর আমার পলিসিকে `ট্রাম্পের চেয়ে ভয়ংকর’ বলেছেন। যুক্তি তর্কের কথাই যদি আসে, তবে ট্রাম্পের বর্ণগত ও সাংস্কৃতিক শোষণের ব্যাপারটির কী হবে?
আমি বলছি না যে ট্রাম্পের অনুসারী সবাই বর্ণবাদী। এখানেও সাধারণ, ভালো মানুষও আছে। তার বিরুদ্ধে যৌনতার যে কেলেঙ্কারী, মুসলিম ফেডারেল জজকে আক্রমণ, বর্ণবৈষম্যের এত অভিযোগের পরেও সে কীভাবে জয়ী হয়! বর্ণ ও জাতিগত সমস্যাটি বেশ বিশাল ছিল। তার এই বৈষম্যের কারণে ভোটার রা ভেবেছিলোআমি তাদের সঙ্গে নেই। কিন্তু এটা একদম ভুল।
কোথায় গেল গণতন্ত্র?
রিপাবলিকানদের একটা সুবিধা ছিল যে তাদের একটি শক্তিশালী, স্থায়ী বাজনৈতিক অবকাঠামো ছিল। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটিটা দমেই গিয়েছিল।
এটা মাথায় রাখা দরকার যে আমরা যদি ভবিষ্যতে জিততে চাই, ডেমোক্রেটদের অনেক এগিয়ে যেতে হবে। এটা শুধু তথ্যগত না। আমাদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও দরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে হলে। আমি অবশ্য এতটা পারদর্শীও নই এসব ব্যাপারে। আমাদের পরাজয় থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমার মনে হয় এটি আমার বহুদিন মনে থাকবে, নির্বাচনে আমাদের কী কী ভুল ছিল। আমার বক্তব্যে আমি বলেছি চুপ করে থাকাটা বেশ কষ্টের। এতকিছুর পর আমরা হতাশ বা মুখ গোমড়া করে নেই। ডেমোক্রেটদের শক্তিশালী করতে আমরা যেকোনো কিছু করতে পারি। এই বইটি পড়লে আপনিও এর অংশীদার হবেন আশা করি।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন