ভারতকে চাপে রেখে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে চীন ও পাকিস্তানের নৌবাহিনী। ‘ফ্রেন্ড-২০১৭’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চীনের সাংহাইয়ে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ নভেম্বর পাকিস্তানের নৌবাহিনীর জাহাজ পিএনএস সাইফের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন শাহজাদ ইকবাল চীনের গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ (ফ্রিগেট) জিংজু পরিদর্শন করেন।
ওই দিন পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ (ফ্রিগেট) পিএনএস সাইফ পাঁচদিনের সফরে সাংহাইয়ে পৌঁছায়। ৫ ডিসেম্বর চীনের সামরিক পত্রিকা ‘চায়না মিলিটারি’র এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়।
জিংজুর কমান্ডিং অফিসার কমান্ডার ওয়াং হংবিংয়ে সঙ্গে বৈঠকে ইকবাল জানান, তিনি গত বছর উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের ডালিয়ান নেভি একাডেমীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এসময় ওয়াং জানান যে তিনিও একই একাডেমীতে শিক্ষা গ্রহন করেছেন এবং একজন এলামনাইয়ের সাথে সাক্ষাতে তিনি বেশ খুশি।
উভয় নৌকর্মকর্তা একে অপরের যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন করেন। পিএনএস সাইফ পরিদর্শনকালে দর্শকদের ফ্রিগেটটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানানো হয়। চীনা প্রতিনিধিরা পাকিস্তান নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও দেখেন এবং ঐতিহ্যবাহী পাকিস্তানী খাবার খান।
একই দিন চীনা ও পাকিস্তানি নাবিকদের মধ্যে পেশাদার অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়। দুই পক্ষ জলদস্যু বিরোধী অপারেশনের প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিন-দিনব্যাপী পরিকল্পনা পর্যায়ে, দুই পক্ষের মধ্যে মহড়ার বিস্তারিত ঠিক করার জন্য দুইটি সমন্বয় সভা এবং তিনটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে সামুদ্রিক মহড়ার ক্ষেত্রে দুই নৌবাহিনীর মধ্যে সামঞ্জস্যতা বৃদ্ধি পাবে আশা করা হচ্ছে।
সামুদ্রিক মহড়ায় দশটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত, যেমন তাজা গোলাবারুদের ব্যবহার, যৌথ অনুসন্ধান ও উদ্ধার, এবং সন্দেহজনক ছোট টার্গেটগুলো নিষ্ক্রিয় করা।
এটি চীনা ও পাকিস্তানি নৌবাহিনীর মধ্যে পঞ্চম যৌথ সামরিক মহড়া, যা তিনটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে – পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনা।
যৌথ নৌমহড়ায় চীনের ফ্রিগেট জিংজু ও পাকিস্তানি নৌবাহিনীর ফ্রিগেট পিএনএস সাইফ অংশ নেয়।
পাকিস্তানের বন্দরে চীনের যুদ্ধজাহাজ, উদ্বিগ্ন ভারত
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর গোয়াদরে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)’র যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি ভারতের জন্য ভবিষ্যতে উদ্বেগের কারণ হবে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল সুনিল লানবা।
শুক্রবার নয়া দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এডমিরাল লানবা বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি পিএলএ’র রণতরী গোয়াদরে নোঙ্গর করে তাহলে তা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এই উদ্বেগ দূর করার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।’
লানবা জানান যে গোয়াদরের বেশিরভাগ অংশের মালিকানা এখন চীনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। তিনি বলেন, ‘এটা একটি বাণিজ্যিক বন্দর এবং চীন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর (সিপিইসি)’র অংশ। তবে পানসি বন্দর থেকে সাবমেরিন অপারেশনের কোনো খবর আমার জানা নেই।’
লানবা আরো জানান, যে কোনো মুহূর্তে ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর অন্তত ৮টি যুদ্ধজাহাজকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাবে। ২০০৮ সাল থেকে এসব জাহাজ মোতায়েন শুরু হয়। এসব জাহাজের তিনটি জলদস্যুতা প্রতিরোধের কাজে নিয়োজিত থাকে এবং বছরে দু’বার প্রহরা জাহাজ নিয়ে সাবমেরিন এই অঞ্চলে টহল দেয়।
লানবা আরো বলেন যে, গত আগস্টে নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো, তখন এই অঞ্চলে চীনের ১৪টি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছিলো।
ওই সময় চীন-ভুটান সীমান্তের দোকলাম উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে অচলাবস্থা চলছিল। ২৮ আগস্ট দুই পক্ষ সেনা সরিয়ে নিলে ৭৩ দিন ধরে চলা অচলাবস্থার নিরসন ঘটে।
ভারত মহাসাগরে চীনা সাবমেরিনের আনাগোনার ওপর ভারতীয় নৌবাহিনী নজর রাখছে বলেও লানবা জানান।
ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান বলেন, ‘পিএলএ’র সাবমেরিনগুলো মোতায়েন শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। বছরে দুই বার দুটি করে সাবমেরিন তিন মাস অবস্থান করে। একটি প্রচলিত সাবমেরিনকে অনুসরণ করে আসে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন (এসএসএন)। এই প্যাটানের ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা তাদের মোতায়েনের ওপর নজর রাখছি। ২৪ বা ৪৮ ঘন্টায় একবার করে নজরদারি বিমান পাঠিয়ে সামমেরিনগুলো মনিটরিং করা হয়।
তবে, ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান বলেন যে চীনা সাবমেরিনগুলো মূলত জলদস্যুতা প্রতিরোধের কাজ করছে এবং অনেক দিন ধরেই কাজটি করা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন