জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্পের ব্যাপক বিতর্কিত ঘোষণার পর গাজা স্ট্রিপজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা কয়েক দশকের মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে চুর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে এবং একই সঙ্গে ফিলিস্তিনীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
তারা শহরের রাস্তা অবরোধ করে মার্কিন পতাকা ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে এবং গগণবিধারী চিৎকার করে আমেরিকা বিরোধী স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ জর্ডানের রাজধানী আম্মানেও প্যালেস্টাইনী উদ্বাস্তুরা রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
আম্মানের সীমান্তবর্তী বাকারা শরণার্থী ক্যাম্পের শত শত লোক রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন এবং ইসরাইলের সঙ্গে ১৯৯৪ সালের শান্তি চুক্তি বর্জনের জন্য জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানান।
‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘আমেরিকা সন্ত্রাসের জননী’ মুর্হুমুহু স্লোগানে রাজপথ কম্পিত করে তুলে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনীরা।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার আগে সারা বিশ্ব থেকে সতর্ক করা হয় যে, এ ধরনের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে দেবে। কিন্তু ট্রাম্প এসব সতর্ক বার্তা মোটেই আমলে নেন নি।
গাজা উপত্যকা ও বেথলহাম শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি এবং গাজা উপত্যকায় ট্রাম্পের কুশপুত্তলিক পোড়ানো হয়েছে। এছাড়া, ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে বেথেলহাম শহরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বড়দিন উপলক্ষে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি’র আলোকসজ্জার সুইচ বন্ধ করে দেন।
এদিকে, ফিলিস্তিনীদের বিবদমান গ্রুপগুলো সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন এবং বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
গাজা উপত্যকার উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের শত শত ফিলিস্তিনী রাস্তায় মেনে এসে ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।
গাজা সিটির কেন্দ্রস্থলেও অনুরূপ দৃশ্য দেখা গেছে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা এবং প্যালেস্টাইনের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের ছবি বহন করে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
এ ছাড়া সৌদি আরব, তুরস্কের আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তোলপাড়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্কতা সত্ত্বেও বুধবার সন্ধ্যায় এক টেলিভিশন ভাষণে ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরেরও নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। তার এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে মুসলিম তথা গোটা বিশ্ব।
তার এই পদক্ষেপে বিশ্ব নেতারাও নিন্দা জানিয়েছে। মুসলিম বিশ্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা এই ঘোষণার নিন্দা জানান।
কেবল ফিলিপিন্স এবং চেক প্রজাতন্ত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ট্রাম্পের নেতৃত্ব অনুসরণ করবে এবং তেল আবিব থেকে তাদের দূতাবাস সরানো হতে পারে।
এদিকে হামাস ট্রাম্পের এই ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে ‘নরকের দরজা’ খুলে গেল।
তারা আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের দূতকে নিজ নিজ দেশ থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মহাসচিব বলছেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘পৃথক দুই রাষ্ট্রের ভাবনা’র সর্বশেষ আশাটুকুও শেষ হয়ে গেছে।
তিনি মনে করেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যার মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও মর্যাদা হারিয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটি সাহসী’ ও ‘ন্যায়-সংগত’ সিদ্ধান্ত।’
সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন