জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পেছনে কাজ করছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার ইহুদিদের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টি। বিবিসি বাংলার কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিন পি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাজ হাশমি এমন মন্তব্য করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ড. তাজ হাশমি বলেন, জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন তা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিচুক্তির পৃষ্ঠদেশে ছুরি চালানোর মত কাজ। এ সিদ্ধান্তের ফলে যেটা এতদিন প্রশমিত হয়েছিল ফিলিস্তিনে সন্ত্রাস নিয়ে। এখন দেখা যাবে শুধু ইন্তিফাদা না প্যালেস্টাইন নিয়ে একটা বড় ধরণের একটা ইসলামিস্ট ইনসার্জিংসি এবং সন্ত্রাসবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। শিয়া, সুন্নি নির্বিশেষে মুসলিম বিশ্বের জনগণ, আমরা জানি ফিলিস্তিনদের পক্ষে এবং তারা সবাই আশা ছেড়ে দিলেও কিছুটা আশান্বিত ছিল শান্তি চুক্তি হবে। ফিলিস্তিন আলাদা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। তার রাজধানী হবে জেরুজালেম। এ প্রক্রিয়া একবারেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি উদ্বেগ অনেকদিন ধরে মৃত প্রায়। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী কার্যত এ উদ্বেগ থেকে একেবারেই পুরোপুরি হাত গুটিয়ে নিচ্ছে, এতে আপনার কী মনে হয়?
এ প্রশ্নের জবাবে ড. তাজ হাশমি বলেন, তাই মনে হচ্ছে। কেননা ট্রাম্প যেভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে এবং তাদের ইসলাম বিদ্বেষী একধরণের রেসিজম রয়েছে সেটা অস্বীকার করা যায় না। এখানে তারই প্রতিফলন ঘটছে। ট্রাম্প ৬টি মুসলিম প্রধান দেশে জনগণকে আসার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। যেটা সুপ্রিম কোর্টও আইন করে ফেলছে। এর সঙ্গে এটা যোগ করলে দেখা যায় এর পিছনে ইসলামি বিরোধী মনোভাব প্রচন্ডভাবে কাজ করছে।
এতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের সংকটে দুই দেশের রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা আন্তর্জাতিকভাবে বলেছিল যেখানে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে গড়ে উটবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। সে সমাধানের পথ কি আসলে রুদ্ধ হয়ে গেল?
এ প্রশ্নের জবাবে ড. তাজ হাশমি বলেন, আপাতত তাই মনে হচ্ছে। যে এখন আরো তোড়জোড় করে আমেরিকারা ইসরায়েলের পক্ষে যাচ্ছে এবং বড় কথা যে ট্রাম্প কেন করছেন? এর পিছনে মূলত আমি মনে করি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখানে বড় করে দেখা দিয়েছে। কারণ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। রাশিয়া আমেরিকার নির্বাচনকে প্রভান্বিত করেছে ইত্যাদি নিয়েও তদন্ত হচ্ছে। তাকে অবিশ্বাসের যে দাবি উঠছে, প্রথমত ট্রাম্প চাইছে এ বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে যাক এবং জনগণের মনোযোগটা অন্যদিকে যেন চলে যায়। দ্বিতীয়ত ট্রাম্পের মেয়ের জামাতা জ্যারেড কুশনার নিজে একজন ইহুদি এবং আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যের পলিসির একজন নির্ধারক। সুতরাং জ্যারেড কুশনারের একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার থাকতে পারে। ইসরায়েলের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক নিবিড় করা। তৃতীয়ত জায়ানিস্ট এবং ইসরায়েলি লবিংকে ডোনাল্ড ট্রাম্প খুশি করতে চাইছে কেননা তারা অনেকে জানে না ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র ইহুদি বিরোধী কে কে ছিল সুতরাং ওটাকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প উঠে পড়ে লেগেছে যে দেখ আমি এ্যান্টিজায়োনিস্ট নই এবং এ্যান্টিসেমিটিক নই এবং আমি মুসলমানদের ব্যাপারে ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি এবং এতে তার দক্ষিণপন্থী ইহুদিবাদি যারা রয়েছেন তাদেরও সমর্থন লাভ করতে সমর্থ হবেন।
ড. তাজ হাশমি আপনি যদি এখানে একটু দেখেন যে যুক্তরাষ্ট্রের যে পদক্ষেপ, যে ঘোষণা এল যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে সমস্ত পশ্চিমামিত্র দেশগুলো কিন্তু কেন ট্রাম্প এরকম সিদ্ধান্ত নিলেন? ইসরায়েলের কাছ থেকে কি খুব বড় ধরণের চাপ ছিল?
এ প্রশ্নের জবাবে ড. তাজ হাশমি বলেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোন চাপই ছিল না। ট্রাম্প একমাত্র নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা চিন্তা করছেন এবং এর প্রতিফল কোনভাবেই ভালো হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন