মাত্র এক দশক আগেও বাংলাদেশের টাইলসের বাজার ছিল মূলত আমদানিনির্ভর। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সে চিত্র পাল্টে গেছে। কারণ দেশীয় টাইলস দিয়েই এখন চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি পূরণ হচ্ছে। গ্যাসসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানো হলে দেশের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে আগামী পাঁচ বছরে এটি রফতানিমুখী শিল্পে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় উৎপাদকদের উৎপাদনক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা গেলে আগামী চার বছরের মধ্যেই দেশীয় টাইলস স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। তবে গ্যাস-সংকট এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু গ্যাসের সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদন শুরু করতে পারছে না।
তবে উদ্যোক্তারা বলেন, টাইলস একটি গ্যাসনির্ভর শিল্প। বর্তমানে গ্যাসের সংকটের কারণে উৎপাদনকাজ ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের উচিত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্ভাবনাময় এ খাতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা। তারা আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী সিরামিকপণ্যের বাজার এখন প্রায় চার হাজার ১২৭ কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ, অর্থাৎ চার কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য জোগান দেয়।
দেশে টাইলসের ব্যবহার যে বাড়ছে, তা এর উৎপাদক ও ব্যবহারকারী সবাই স্বীকার করছেন। বাংলাদেশ সিরামিক ওয়্যারস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডব্লিইএমএ) ও আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিহ্যাব বলছে, নির্মাণ কাজে সিরামিক টাইলসের ব্যবহার এখন অনেকটা একচেটিয়া।
রিহ্যাব কর্মকর্তা লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘শুধু আমাদের নির্মিত ভবনগুলোতেই যে টাইলস ব্যবহার হচ্ছে তা না, ব্যক্তিপর্যায়ে যেসব পাকা বাড়ি বা বাণিজ্যিক ভবন তৈরি হচ্ছে, সেগুলোতেও এখন টাইলস ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাঁচা বাড়িগুলোতেও ভাঙা টাইলস দিয়ে জোড়া দেওয়া মেঝে দেখতে পাবেন।’
বিসিডব্লিইএমএর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ১৭টি প্রতিষ্ঠান টাইলস উৎপাদন করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড সেনিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি (বিআইএসএফ) দেশে ১৯৭৭ সালে প্রথম সিরামিক টাইলস ও সেনিটারিপণ্য বানানো শুরু করে। আর বেসরকারিভাবে ১৯৯৩ সালে মধুমতি সিরামিকস প্রথম এ খাতে বিনিয়োগ করে।
এরপর তাইওয়ানের বিনিয়োগে ফু-ওয়াং সিরামিক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগে আরএকে সিরামিকস, চায়না-বাংলা সিরামিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টাইলস উৎপাদন শুরু করে। বসুন্ধরা, প্রাণ-আরএফএল এবং পারটেক্সের মতো বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও এ খাতে বিনিয়োগ করছে। শিগগিরই তারা উৎপাদনে যাবে। উদ্যোক্তাদের মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে টাইলসশিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সংগঠনটির হিসাবে, গত অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার টাইলস বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদকদের তৈরি টাইলস বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৯৫০ কোটি টাকার। বিক্রির হিসাবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে রয়েছে বাজারের ৮০ শতাংশ।
সংগঠনটির মতে, গত পাঁচ বছরে দেশে আমদানি হওয়া টাইলসের বাজার খুব একটা বাড়েনি। আমদানি হওয়া টাইলসের ৯০ শতাংশই আসে চীন থেকে। পাশাপাশি স্পেন, হংকং, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও টাইলস আমদানি হয়।
জানা গেছে, টাইলসের কাঁচামালের বেশির ভাগ উপাদানই আমদানিনির্ভর। টাইলসের মাটি ও সিলিকা বালু যথাক্রমে ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে সংগ্রহ করা হলেও বোন অ্যাশ, অ্যালুমিরা বল থেকে শুরু করে উৎপাদনে প্রয়োজনীয় প্রায় সব যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য, ভুটান ও নেপালে টাইলস রফতানির বড় সুযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি পোশাকের মতো নগদ অর্থসহায়তাসহ প্রণোদনা পেলে রফতানি বাড়ানোর সুযোগ আছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকার প্রবেশাধিকার-সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেলে ওই বাজারেও রফতানি বাড়বে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন