মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনেও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের বিমান ও রকেট হামলায় ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাসের দুই নেতা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবারও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ফিলিস্তিনিদের। এসব সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন আরব দেশে বিক্ষোভ চলছে।
গাজায় ইসরায়েলের বিমান ও রকেট হামলা
শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় দুই ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ হামলায় আরও আহত হয়েছে ১৫ জন। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদ্র এক বিবৃতিতে জানান, গাজা শহরের দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্র হামাসের ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে দুইজন ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হামাসের সামরিক শাখা জানিয়েছে, নিহত দুই নেতা হলেন, মুহাম্মদ আল-সাফাদি (২৯) এবং মাহমুদ আল-আত্তাল (২৮)।
ইসরায়েলের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এর আগে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) হামাসের ২টি অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র, ১টি অস্ত্র গুদাম ও ১টি সামরিক কম্পাউন্ড লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। হামাসের রকেট হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয় বলে দাবি ইসরায়েলের।
হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসিম বলেন, আমরা প্রতিটি শহরের মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। নতুন ইন্তিফাদা ও জেরুজালেমকে রক্ষায় আপনারা রাজপথে নেমে আসুন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার পশ্চিম তীরের বেথেলহেমে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন। বাকি দশজন ইসরায়েলি বাহিনীর টিয়ার শেলের গ্যাসে আহত হন।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকা থেকে খান ইউনুসের সীমান্ত বেস্টনির দিকে মিছিল নিয়ে যায়। সংঘর্ষের আশঙ্কায় ইসরায়েল বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রেখেছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে ও পশ্চিম তীরের বেথেলহেমের র্যা চেল সমাধির কাছেও বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনিরা।
ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার শেল ছুড়ে ইসরায়েলি বাহিনী
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে ফিলিস্তিন। শুক্রবার কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভে অংশ নেন। পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার অন্তত ত্রিশটি স্থানে ইসরায়েলি বহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। শুক্রবারের ওই বিক্ষোভে ফিলিস্তিনজুড়ে ৭০০ মানুষের আহত হয়েছে। এদিন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে গাজা উপত্যকায় ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত ঘোষণায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার নীতির পরিবর্তনকে ইসরায়েল স্বাগত জানালেও আরব এবং মুসলিম বিশ্ব নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোও কয়েকদশকের নীতি বদলে দেওয়ার এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও বিক্ষোভ হচ্ছে। জর্ডান, মিসর, ইরাক, তুরস্ক, তিউনিশিয়া এবং ইরানে ফিলিস্তিনপন্থি হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেছে। মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মত মুসলিমপ্রধান বিভিন্ন দেশেও বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইহুদি-খ্রিস্টান ও মুসলিম; তিন সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য পবিত্র ধর্মীয় স্থান জেরুজালেম। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এই শহরটি। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল বাহিনী পূর্ব জেরুজালেম দখলে নেয়। তারা চায় পুরো জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী করতে। আর ফিলিস্তিনিরা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য পূর্ব জেরুজালেমকেই রাজধানী করতে চায়। পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের দখল আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী। বুধবারের আগে কোনও দেশ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন