মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা রোহিঙ্গা নারী ও কন্যা শিশুদের ছক কষে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ছাড়াও মাত্র নয় বছরের শিশুও ধর্ষিত হয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অত্যাচার, খুন শুধু নয়, ধর্ষণকেও তারা জাতিনিধনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ধর্ষিতারা সংখ্যায় কত? যাচাই করার কোনও উপায় রাখেনি অং সান সুচির সরকার। রাখাইনে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ এখনও নিষিদ্ধ। ‘মেদস্যাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে’ (‘সীমান্তহীন চিকিৎসক’ নামে এক আন্তর্জাতিক সংগঠন) জানায়, তারা ১১৩ জন ধর্ষিতার চিকিৎসা করেছে। চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবীদের বড় একটা অংশের ধারণা, আরও বিপদে পড়ার আশঙ্কায় নির্মম অভিজ্ঞতার কথা গোপন করে গিয়েছেন অনেকে। যারা মুখ খুলেছেন, তারাও নামের আদ্যাক্ষরের বেশি জানাতে নারাজ। তাদের বক্তব্যের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো ও রাখাইন থেকে পালাতে বাধ্য করতে সেনা-হামলার একটা সুনির্দিষ্ট ছক পাওয়া যাচ্ছে। আনন্দবাজার পত্রিকা।
ফতিমা (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছেন, সূর্য ডোবার কয়েক ঘণ্টা পরে চড়াও হয়েছিল সেনা। প্রথমেই স্বামীকে বেঁধে ফেলে। লুট করে তার গহনা। পোশাক ছিঁড়ে ফেলে এক জন এক জন করে ধর্ষণ করতে থাকে তাকে। বাধা দেয়ার অবস্থাতেই ছিলেন না। কয়েক দিন আগে ফতিমা জেনেছেন তার বাবা-মাকে খুন করেছে সেনারা। সে রাতে ফতিমার স্বামীকে গুলি করে, গলার নলি কেটে খুন করে চলে যায় সেনা সদস্যরা। মাসখানেক আগে বিয়ে হয়েছিল ফতিমার। ওই রাতের পরে কীভাবে যে আশ্রয় শিবিরে এসে পৌঁছেছেন, তা এখনও গুছিয়ে বলতে পারেন না।
সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্টে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি রাখাইনে।
প্রশ্ন উঠছে, ফতিমার গর্ভে তবে কার সন্তান? বাংলাদেশের শিবিরে তার মতো অনেকেই সন্তানসম্ভবা। সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নেরই জবাব দিতে রাজি নয় বর্মি সেনাবাহিনী।
আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণে উৎসাহী নন তারা। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চিন্তায় বাংলাদেশ সরকার। তাদের মিয়ানমারে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হলেও রয়েছে বহু ঝামেলা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে শুধু ইচ্ছুকদেরই মিয়ানমারে ফেরাতে পারবে ঢাকা। কিন্তু অনেকেই ইচ্ছুক নন ফিরতে। ফিরতে হলে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে যে সব প্রমাণপত্র থাকা দরকার তা-ও নেই অনেকের কাছে।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলাদশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘‘ঢাকা-ইয়াঙ্গন যোগাযোগ রেখে চলছে। কিন্তু শুধুই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক স্তরে জরুরি ভিত্তিতে এ নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি।’’
রোহিঙ্গাদের মিয়ানামারে ফেরানোর রাস্তা খুলতে শেখ হাসিনা সরকার আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও নজরদারির পক্ষে সওয়াল করছে প্রথম থেকেই। জাতিসংঘে ফের একই আবেদন জানালেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
নিউজবাংলাদেশ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন