কাজী ইমদাদ
ক্রমবর্ধমান চাপ তখন মিয়ানমার সরকারের ওপর। ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশন। সুচি যে অধিবেশনে যাচ্ছেন না ঘোষণাটি আগেই এসেছে। সাধারণ পরিষদের এ অধিবেশন শুরুর দিনই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন সুচি। সুচির বক্তব্য দেওয়ার একদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেস বিবিসির টকশো হার্ড টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুচিকে তার আসন্ন ভাষণকে সংকট সমাধানের শেষ সুযোগ হিসেবে অ্যাখা দেন। গুতেরেস মনে করেন, যদি এ ভাষণের মধ্য দিয়ে সংকট সমাধানের কোন পথ সুচি বের করতে না পারেন তবে এর পরিনতি হবে ভয়াবহ। যে সংকট তৈরি হয়েছে তা আরও জটিল আকার ধারণ করবে। গুতেরেস বলেন, ‘এখন যদি তিনি(সুচি) পরিস্থিতি পাল্টাতে না পারেন, তাহলে আমার মনে হয়, বিপর্যয়টা হবে ভয়ংকর। আর সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী করে এর সমাধান সম্ভব- তার কোনো উপায় আমি দেখছি না।’ গুতেরেস বলেন, মিয়ানমার যে এখনও অনেকখানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তা বেশ স্পষ্ট। আর রাখাইনে যা ঘটছে, তা সেনাবাহিনীর কারণেই ঘটছে। এই দমন-পীড়নে যেসব রোহিঙ্গা দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়েছে, তাদের নিজেদের ঘরে ফেরার সুযোগ দিতে আবারও আহ্বান জানান তিনি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসার একদিন আগেই সোমবার গুতেরেসের পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব এর আগেও মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সুচির সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনেও কথা বলেছেন। হতাশা প্রকাশ করে গুতেরেস বলেন, মিয়ানমার জাতিসংঘের কথা কানে তুলছে না। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর গুতেরেস জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি চিঠিও লেখেন। গত তিন দশকের মধ্যে তিনিই প্রথম কোনো মহাসচিব যিনি ব্যাপক ক্ষমতাধর সংস্থাটির কাছে চিঠি লেখেন, রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ব্যাপারে পদক্ষেপ আশা করে। এরপরই নিরাপত্তা পরিষদ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায়।
বৈঠকে ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রই রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সম্মত হয়। নিরাপত্তা পরিষদ বিগত ৯ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম একমত পোষণ করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে ‘বিরল ঐকমত্য’ আখ্যা দেয়।
বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “১৫ সদস্যের এই কাউন্সিল মিয়ানমারের রাখাইনে পরিচালিত নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ‘অতিরিক্ত সহিংসতা’র খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে। চলমান সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্স। এই দেশগুলোর প্রতিটির যে কোনো প্রস্তাব আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।জাতিসংঘ-রোহিঙ্গা সংকট-মিয়ানমার
এদিকে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিত চীন। বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য দ্য আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি’কে দায়ী করেছিলেন। এমনকি মিয়ানমারের সরকারও বিদ্রোহী গোষ্ঠিটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠির সংশ্লিতা রয়েছে বলে অভিযোগ তরে। এর মধ্যেই মিয়ানমারকে চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ‘শাস্তি’র হুমকি দেয় আল-কায়েদা। তবে সকল ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে একটি বিকৃতি প্রদান করে দ্য আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি’ । একইসঙ্গে তারা রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে ঘোষণা দেয়। মিয়ানমার সরকারও এ অজুহাতকেই কাজে লাগিয়েছে রোহিঙ্গা তাড়াতে।
যদিও মিয়ানমারের রাখাইন নির্যাতন নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত খবরগুলোকে বানোয়াট বলে দাবি করে মিয়ানমার। এমন অবস্থায় সুচির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ সংকটের সমাধান হোক এমনটাই চাইছিলো বিশ্ব। চীন, রাশিয়া বাদে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, তুরষ্কসহ গোটা বিশ্বের নজরও সুচির বক্তব্যের দিকেই ছিলো। ভাষণে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নাকি ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীকে তুষ্ট করার চেষ্টা করবেন তা নিয়ে কৌতূহলী অনেকে। ৫০ বছরের বেশি সময় সেনাশাসনের পর গত বছর ক্ষমতায় আসেন সুচি। এরপর থেকে তিনি সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতায় আসার পর এটিই হবে সুচির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ। রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ নিয়ে তিনি কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও এদিন তার অবসান হবে। ভাষণের কিছু অংশ ইংরেজিতে হতে পারে, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে কথা বলবেন তিনি। তবে সেনাবাহিনীর ওপর তার ক্ষমতা সীমিত। মিয়ানমারে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের ওপর লেখা একটি বইয়ের গ্রন্থকার ফ্রান্সিনস ওয়েড বার্তা সংস্থা এএফপিকে একটি সাক্ষাতকার দেন।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-জাতিসংঘ
সুচির এ বক্তব্য নিয়ে বলেন, ‘তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, তার প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে সরকার ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ক রক্ষা। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তার কাছে গৌণ। এতে অবধারিতভাবে যে প্রশ্ন উঠছে তা হচ্ছে তিনি কী মানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু মিয়ানমারের রাজনৈতিক খেলা পুরো সম্প্রদায়কে বিসর্জন দেয়ার চেয়েও মূল্যবান। গত দুই বছর সুচি এমন কোনো পদক্ষেপ নেননি যাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এখন সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সুচির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নকে সমর্থন করে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা। ফলে সুচি আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করলে জনগণের সমর্থন হারাবেন। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, আরেকটি সেনা অভ্যুত্থানের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। জাতীয় নিরাপত্তা অজুহাত দেখিয়ে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন তাদের দমন-পীড়নকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে। এএফপি জানায়, রাখাইনের নিধনযজ্ঞকে পুঁজি করে সেনাপ্রধান মিন অং হাইয়াং এখন দেশটিতে অপ্রত্যাশিত রকমের জনপ্রিয়তা ভোগ করছেন। সেনাবাহিনীর এ শক্তি প্রদর্শনের মধ্যে সুচির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সংশয় দানা বাঁধছে। এমন দোলাচলের মধ্যেই গোটা বিশ্ব অপেক্ষায় সুচির বক্তব্যের।
বিশ্লেষকদের ধারণাই সঠিক হলো। সেনাবাহিনীকে প্রাধান্য দিতে দেখা গেলো সুচির বক্তব্যে। চীন ও রাশিয়ার সমর্থনের কারণে গোটা বিশ্বকে যে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না মিয়ানমার তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন সুচি। সুচি যে বক্তব্য দিলেন তাতে অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, ইচ্ছা করেই সুচি সংকটটি এড়িয়ে গেছেন। তার বক্তব্যে এমন মনে হয়েছে যে তিনি কিছুই জানেন না অথবা জেনেও না জানার ভান করছেন! তখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা কেন প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না এমনটা জানিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন সুচি। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যখন বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগত-ভাবে নির্মূল’ করা হচ্ছে, তখন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সু চির অবগত না থাকার কথা বেশ হতবাক করে গোটা বিশ্বকেই।
অধিকাংশ মুসলিম পালিয়ে যায়নি এবং সহিংসতা বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেন মিয়ানমারের নেত্রী। এ সংঘাতের কারণে দুর্দশাগ্রস্থ ‘সকল মানুষের’ প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সুচি তার বক্তব্যে রাখাইনের মুসলিমদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি যেন সেদিন শোনা গেল সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করা সুচির মুখে। সেদিনের সুচির সে মুখ যেন সেই সুচির মুখ নয়, যে সুচির মুখ প্রতিবাদ করেছে জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে, যে সুচি জেল খেটেছে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায়। যে সুচিকে সারাবিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখেছে! না, সেদিনের সে সুচি ছিলো সম্পূর্ণ উল্টো। এ যেন অন্য এক সুচি। এ সুচিকে এর আগে কখনই দেখেনি বিশ্ব! এ সুচির মুখের ভাষাতেও নেই সে মায়া, নেই সে মমতা! সেনাবাহিনীর একজন প্রতিনিধি হিসেবেই সুচিকে সেদিন দেখেছিলো গোটা বিশ্ব। সুচি তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি সেদিন। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে তাড়ানোর একটা স্ট্রাটেজির অংশ রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত না করে বাঙ্গালী মুসলিম হিসেবে বর্ণনা করা। বক্তৃতার সময় সু চি খানিকটা দৃঢ় কণ্ঠে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইন বহির্ভূত কাজের নিন্দা করেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেননি সেদিন। সুচি বলেন, অধিকাংশ মুসলিম রাখাইন অঞ্চলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এতে বোঝা যায় সেখানে পরিস্থিতি খুব মারাত্মক নয়। সুচি এও বলেন, মুসলিমদের সাথে কথা বলে রাখাইনের সংকট সম্পর্কে জানতে চান তিনি। সুচির বক্তব্যে সেদিন মনে হচ্ছিল যেন মাত্রই আকাশ থেকে পড়লেন। যে মিয়ানমার আর রোহিঙ্গা নিয়ে গোটা বিশ্বে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে, সেই দেশের নেত্রীই জানেন না রাখাইনের অবস্থা!অং সান সু চি-জাস্টিন ট্রুডো-রোহিঙ্গা
বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে বলে জানান সুচি। যদিও সুচির এ বক্তব্য যখন চলছে, তখনও রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সেজন্য সীমান্তে মাইন পুঁতছে দেশটির সেনাবাহিনী। যে মাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন রোহিঙ্গা নিহত হয় পরে। সুচির এ বক্তব্য নিয়ে পরবর্তিকালে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিবিসি তার সংবাদ বিশ্লেষণে সুচির এ বক্তব্যকে বাস্তবতার সঙ্গে কোন মিল নেই হিসেবেই উল্লেখ করে। অথবা সুচি ইচ্ছাকৃতভাবেই সংকট এগিয়ে গেছেন এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। সুচির সমালোচনার আরও একটি কারণ, সুচি তার বক্তব্য বলেছিলেন নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারলে মিয়ানমার ফেরত নিতে পারে রোহিঙ্গাদের। তবে বাস্তবতা হলো অধিকাংশ রোহিঙ্গার হাতে কোন কাগজপত্রই ছিলো না। আগুন যেখানে সবকিছু পুড়ে অঙ্গার, সেখানে কেইবা ভাববেন কাগজপত্রের কথা। সেখানে জীবন বাঁচানোই তো বড় চ্যালেঞ্জ!
সু চি তার ভাষণে বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের পাঁচ তারিখের পর থেকে রাখাইনে কোন অভিযান চালানো হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টি সত্য ছিলোনা। কারণ তখন নাফ নদীর পাড়ে গেলেই দেখা যেত কিভাবে দাউ দাউ করে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বলছিলো! যে রোহিঙ্গারা তখন নাফ পার হয়ে বাংলাদেশে আসছিলো তাদের কাছ থেকেও শোনা যাচ্ছিল কিভাবে প্রতিদিনই জ্বালানো হচ্ছে তাদের গ্রাম। বান্দরবন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ৯ সেপ্টেম্বর এমন এক পরিবারের কথা জানা গেল। একদিন আগেই এ পরিবারের ৫ সদস্য বাংলাদেশে আসে। তবে বৃদ্ধ মাকে তাদের সঙ্গে আসতে পারেনি। পরদিন সকালে মাকে আনতে আবারও ছেলে আনোয়ার ফিরে যায় মংডুর নিজ গ্রামে। মাকে নিয়ে সীমান্তের ঠিক কাছাকাছিও পৌছায় আনোয়ার। তবে ভাগ্য সহায় ছিলো না তাদের। সীমান্তের কাছেই নাসাকা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় তারা। এর দুদিন পর মা ও সন্তানের লাশ বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে আনতে সক্ষম হয় পরিবারের বাকি সদস্যরা। বাংলাদেশেই তাদের কবর দেওয়া হয়। এ ঘটনাগুলো সুচির বক্তব্যের অসারতাকে দেখিয়ে দিচ্ছিলো। বিবিসি’র সাংবাদিক জোনাথন হেডের সঙ্গে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে আমার যে কথা হয়েছিলো সেখানেও তিনি আমাকে বলেছিলেন, সেপ্টেম্বর মাসের পাঁচ তারিখের পর তিনি যখন মিয়ানমার সরকারের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করতে দেখেছেন।
সুচির সম্মানসূচক পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়া: রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে দেওয়া সম্মানসূচক সদস্যপদ স্থগিত করে যুক্তরাজ্যের অন্যতম ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিয়ন। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়নটি এক বিবৃতিতে জানায়, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা কমাতে সু চিকে আহবান জানাচ্ছেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান সংবাদ প্রকাশ করে, আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠন সু চিকে দেওয়া সম্মানসূচক পদ ও ডিগ্রি স্থগিত করতে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।rohingya-রোহিঙ্গা-অং সান সু চি
সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে লড়াইয়ের সময় গৃহবন্দী থাকার মধ্যে ২০১০ সালে ইউনিয়ন মিয়ানমারের বর্তমান স্টেট কাউন্সিলর সু চিকে সম্মানসূচক সদস্যপদ দেয়। সংগঠনের সভাপতি মার্গারেট ম্যাককি গার্ডিয়ানকে জানান, রোহিঙ্গাদের হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে অং সান সু চির সম্মানিত সদস্যের পদ স্থগিত করা হয়েছে। আশা করছি আন্তর্জাতিক চাপে সাড়া দেবেন তিনি। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সম্মানিত সভাপতির পদ থেকেও সু চিকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানায়। একই প্রক্রিয়া চালাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর কর্তপক্ষও।
ডাবলিন ইয়র্কশায়ারের শেফিল্ডসহ কয়েকটি শহর থেকে সু চিকে ‘ফ্রিডম অব সিটি’ সম্মাননা দেওয়া হয়। এসব সম্মাননা ফিরিয়ে নিতে শহর কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়ছে রীতিমত। এ ছাড়া সু চিকে দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি আবারও পর্যালোচনা করে দেখার কথা জানায় দেশটির ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে থাকায় আমরা ১৯৯৮ সালে সু চিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই ডিগ্রির বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া একই প্রক্রিয়া চালাতে শুরু করে ক্যামব্রিজ, গ্ল্যাসগো বাথসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও। এসব কর্তৃপক্ষ তাকে বিভিন্ন সময় সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছে। দাবি উঠেছে, ১৯৯১ সালে শান্তিতে দেওয়া সু চিকে নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ারও। (চলবে)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন