বিশ্বজুড়ে বার্মিজ রত্ন পাথরের কদরই আলাদা। বিশ্বের বড় বড় সেলিব্রেটিদের গলায় শোভা পায় বার্মিজ রত্নের অলঙ্কার। বিশ্বের বিখ্যাত সব অলঙ্কার ব্রান্ডও ব্যবহার করে সেসব। কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের জেরে এই অলঙ্কার ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বিলাসবহুল অলঙ্কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কার্টিয়ের গত সপ্তাহে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে বলেছে, মিয়ানমার থেকে আর রত্ন কিনবে না তারা। এর আগে অ্যাক্টিভিস্টরা ফাঁস করেন, কার্টিয়েরের তৈরি গলার হার, কানের দুলে রয়েছে বার্মার নীলকান্তমণি। এরপরই নিজেদের ফেসবুক পেজে দেয়া এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, গত শুক্রবার থেকে মিয়ানমারের রত্ন কেনা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের জেরে মিয়ানমার থেকে আসা রত্নপাথরকে ‘জেনোসাইড জেমস’ আখ্যা দিয়ে একাধিক পশ্চিমা দেশে প্রচারণা চালানো হয়েছে।
শুধু কার্টিয়ের নয়। আরেক বিলাসবহুল অলঙ্কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিফ্যানি অ্যান্ড কো মিয়ানমার থেকে মূল্যবান পাথর না কেনার দীর্ঘদিনের রীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যবান রুবি পাথরের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারে। আর তখনই এই বিতর্ক তৈরি হলো। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের টাইমস পত্রিকা। গত জুলাইয়ে প্যারিসে হয়ে গেল মূল্যবান অলঙ্কারের প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত অলঙ্কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজেদের নিত্যনতুন অলঙ্কার উন্মোচন করে। এর মধ্যে ভ্যান ক্লিফ ও আর্পেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ছিল ওইসিউ সার লা ব্রাঞ্চে নামে একটি নেকলেস। এতে ছিল ২৮টি টকটকে লালরঙা বার্মিজ রুবি। ওই অলঙ্কারের ওজন ছিল ৫৬৭.১৭ ক্যারেট!
কার্টিয়ের কোম্পানির টুটি ফ্রুটি শীর্ষক অলঙ্কার সংগ্রহশালায় ছিল বার্মার রত্ন সংবলিত বহু অলঙ্কার। একটি নেকলেসে ছিল হীরা, পান্না ও প্লাটিনামের মতো মহামূল্যবান পাথর। ঠিক মাঝে ছিল একটি নীলকান্তমণি।
কার্টিয়েরের ওয়েবসাইটে বলা নেই এ ধরনের একটি অলঙ্কারের দাম কত। তবে কোনো ডিলার থেকে কোনো অলঙ্কার ছাড়াই শুধু বার্মিজ রত্ন কিনতে কয়েক হাজার পাউন্ড খরচ হয়। দেড় ক্যারেটের একটি রুবি (চুনি) কিনতে খরচ হতে পারে ৭ হাজার ৫০০ পাউন্ড (সাড়ে ৭ লাখ টাকারও বেশি)। দেড় ক্যারেটের গোলাপী মণি কিনতে ১ হাজার পাউন্ডের মতো খরচ হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর দ্য রোহিঙ্গা (আইসিআর)-এর অ্যাক্টিভিস্টরা পরবর্তীতে বুলগারি নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করার পরিকল্পনা করছেন। এই অলঙ্কার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে কিছু নেকলেস ও কানের দুল দেখানো হয়েছে, যাতে বার্মার চুনী, মণি ও জেড (সবুজ পাথর) রয়েছে। মে মাসে, আমেরিকান মডেল বেলা হাদিদ কান চলচ্চিত্র উৎসবে বুলগারির একটি নেকলেস পরেছিলেন, যাতে ছিল ১৮০ ক্যারেট ওজনের একটি মণি।
খুবই দামী এসব পাথর খুঁজে পেতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। এসব নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কারণ, বহুদামী এসব পাথর বিক্রি থেকে প্রাপ্ত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় বার্মার সামরিক বাহিনীর পেছনে। আর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। দেশটির এই মূল্যবান পাথর খনি ও নিলাম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন বর্তমান ও সাবেক জেনারেলরা। সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিই এসবের নেপথ্যে রয়েছে।
এর আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এই মহামূল্যবান পাথর শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু গণতন্ত্রপন্থী বিরোধী নেত্রী অং সান সু চিকে সামরিক জান্তা গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দিলে, ইইউ ২০১৩ সালে ও যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালে ওই অবরোধ প্রত্যাহার করে। এরপর আবারো অনেক পশ্চিমা কোম্পানি বার্মার রত্ন ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু কার্টিয়ের এখন বলছে ফের মিয়ানমার থেকে রত্ন কেনা বন্ধ করে দেবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন