গ্রেপ্তার এড়ানোর পাশাপাশি, অর্থ বাঁচাতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকরা বাস করছেন অস্বাস্থ্যকর অমানবিক পরিবেশে। সাপ ব্যঙ আর মশার উৎপাত আর মালয় পুলিশের ধরপাকড় যেন নিত্যসঙ্গী। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও পুলিশি অভিযানের ভয়ে অনেকের রাত কাটে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজের নীচে কিংবা জঙ্গলে। আর যারা অবৈধ, কাগজপত্রের অভাবে তারা ফিরতেও পারছেন না নিজ দেশে। এসবের জন্য অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ও দূতাবাসকে দায়ী করেন ভুক্তভোগীরা।
এশিয়ার অন্যতম দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ মালয়েশিয়ায় প্রচুর সংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের চাহিদা থাকায়, নানা প্রলোভনে পড়ে বৈধ অবৈধ উভয় পথেই প্রতিবছর দেশটিতে ছুটে আসে হাজার হাজার বাংলাদেশী। পৌনে তিন কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে দশ লাখ বাংলাদেশীর মধ্যে প্রায় সাত লাখই অবৈধ। গ্রেপ্তার এড়াতে এবং কষ্টার্জিত অর্থ বাঁচাতে এসব বাংলাদেশীর জীবন কাটে বিপদ আর আতংকের মধ্যে। অস্বাস্থ্যকর অমানবিক পরিবেশে থাকতে গিয়ে সাপ, ব্যঙ মশার চেয়েও তাদের বেশী ভয় মালয় পুলিশের অভিযানকে। অনেক সময় বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা থাকলেও রেহাই মেলেনা তাদের।
বাংলাদেশী শ্রমিকারা জানান, 'মশার কামড়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যায়। ঘরে সাপ ঢুকে পড়ে। আমাদের কাগজ না থাকায় যে আতঙ্ক তা সিমাহীন। পুলিশি অভিযানের আতঙ্কে আমাদের খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে গেছে।'
তারা সময় সংবাদকে আরো জানান, 'পুলিশের ভয়ে একতলা থেকে বিয়াল্লিশতলা দৌড়ে উঠে পালাতে হয়েছে। পাসপোর্ট দেখালেও টাকা না দিলে পুলিশে ছাড়ে না। অনেক সময় ভয়ে আমরা ব্রিজ কিংবা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি।'
কোনরকম বেঁচে থাকার জন্য নোংরা পরিবেশেই পরিত্যক্ত কাঠ, টিন আর পলিথিন দিয়ে নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন ৮ থেকে ১০ জনের থাকার মত ঘর। এই এক ঘরে রান্না-বান্না, খাওয়া আর ঘুমানোসহ কেটে যায় বছরের পর বছর।
তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় এসে অনেকেরই শোধ হয়নি ঋণের টাকা। আবার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মেলে না চিকিৎসা, নিজদেশে ফেরারও সুযোগ নেই তাদের।
এই কর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে যেসব দালাল ও ব্যবসায়ী, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, চাইলেও তাদের সহায়তা মেলে না। তাছাড়া দূতাবাসের সহায়তা পেতেও গুণতে হয় বাড়তি টাকা।
৩-৪ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় এসেছে এসব তরুণ। উপার্জনও করছে তারা। ৪/৫ বছরেও বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ায় আতংকের মধ্যে থাকতে হয়, জীবন কাটে পালিয়ে ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন