রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন। এ জন্য রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সমর্থন চেয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছেন তিনি। অন্তত ১ হাজার ৬৪০ জন দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে মস্কোয় বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের সময় বেলা তিনটায় মস্কোর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পুতিনের প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকোভ।
সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নই ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে। গাভারিত মাস্কভা বেতার কেন্দ্রের সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই অংশ নেব। যারা আমার আদর্শ ধারণ করে এবং আমার ওপর বিশ্বাস রাখে—এমন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমর্থন খুব চাইছি। আমি এই সমর্থন আশা করছি।’
পুতিন মনে করেন, রুশ জনগণই তাঁর মূল শক্তি। এ প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘রুশ জনগণের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন আশা করছি।’
ইউনাইটেড রাশিয়া দলের হয়ে ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন পুতিন। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বর্তমানে এই দলের সভাপতি। পুতিন মনে করছেন, নির্দিষ্ট একটি দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো অধিকাংশ ভোটারের সমর্থন তিনি পাবেন না। রাশিয়া গণমতামত গবেষণাকেন্দ্রের সর্বশেষ জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ রুশ পুতিনকে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে তৈরি।
৬ ডিসেম্বর দেওয়া এক ঘোষণায় ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান রাশিয়ার এই নেতা। অবশেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন পুতিন। এতে নির্বাচনে পুতিনের অংশ নেওয়া নিয়ে দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে মার্কিন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, যারা ট্রাম্পের বিরোধী দলে রয়েছে, তারাই এই প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা নিজ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করছে, নিজেদের প্রার্থীদের অসম্মান করছে। পুতিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগকে ‘বিকারগ্রস্ত গুপ্তচর’ বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ক্রেমলিনের সম্পর্ক প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের অনেক খাতে দারুণ উন্নতি ঘটেছে। তবে ট্রাম্প কেমন কাজ করছেন, তা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব সে দেশের ভোটারদের, আমার নয়।’
ভবিষ্যতে রাশিয়ার অর্থনীতি কেমন হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাশিয়ার অর্থনীতি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রেখে আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। রাশিয়ার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগও গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে।’
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি দুটি বড় সংকট মোকাবিলা করেছে। তেলের দরপতন ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠেছে রাশিয়া। চলতি মৌসুমে শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক, চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা, আইনব্যবস্থা, দুর্নীতি, সিরিয়া ও ইউক্রেন সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে ১ হাজার ৬৪০ জন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক নিবন্ধন করেন। রুশ নেতার একক কোনো সংবাদ সম্মেলনে এই প্রথম এত বিপুলসংখ্যক গণমাধ্যমকর্মী অংশ নিয়েছেন। বেশির ভাগ সাংবাদিকই রাশিয়ার আঞ্চলিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধি। তবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, চীন, ইউক্রেন, পোল্যান্ড ও এস্তোনিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৯০ জন সাংবাদিক নিবন্ধনপত্র গ্রহণ করেছিলেন। আর গত বছর অংশ নেন ১ হাজার ৪৩৭ জন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভের বরাত দিয়ে তাস অনলাইনের খবরে বলা হয়, বুধবার পুরোটা দিনই সংবাদ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নেন পুতিন। সাংবাদিকদের সঙ্গে পুতিনের এটি কোনো সাধারণ সাক্ষাৎ হবে না। এবারের সম্মেলনকে অন্য সব বছরের তুলনায় পুতিন একটু বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই সাংবাদিকেরা মিলনায়তনে জড়ো হতে থাকনে। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে সাংবাদিকদের তোলা সেলফিসহ বেশ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তাস অনলাইনে প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ওই বছর ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন পুতিনের সবচেয়ে কম সময়ের সংবাদ সম্মেলন ছিল। আর ২০০৮ সালে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে রাশিয়ায় কোনো প্রেসিডেন্টের দীর্ঘতম সংবাদ সম্মেলনের রেকর্ড গড়েন পুতিন।
আগামী বছরের মার্চে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটিই পুতিনের বড় ধরনের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন। সব সময় ডিসেম্বর মাসকে সংবাদ সম্মেলনের জন্য বেছে নেন পুতিন। মূলত সারা বছর প্রেসিডেন্টের কাজের পর্যালোচনা করতেই এমন আয়োজন করে থাকে ক্রেমলিন। এতে আঞ্চলিক গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন করার সুযোগ বেশি থাকে।
পুতিনের প্রথম সাতটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ক্রেমলিনের প্রেসিডেন্ট বাসভবনের ১৪তম ভবনে। পরে ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত ওই ভবন সংস্কারকাজে বন্ধ হয়ে গেলে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সাক্ষাতের স্থান ঠিক হয় মস্কোর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের মিলনায়তন।
রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সরকারি টেলিভিশন ও বেতারকেন্দ্র পুতিনের সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও পুতিনের সংবাদ সম্মেলনের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়। সূত্র: তাস, ভেসতি ডট রু
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন