দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পদের লড়াইয়ে এবার অন্যতম মুখ এনকোসাজানা দামিনি-জুমা। তবে তার সাবেক স্বামী প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার কলঙ্কিত ভাবমূর্তি থেকে নিজেকে আড়াল করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
দামিনি-জুমা আফ্রিকারন ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) একজন প্রবীণ নেত্রী।
১৯৯৪ সালে দেশটিতে সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসানের পর তিনি প্রতিটি সরকারের সময় মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভারি।
বর্ণবাদ-উত্তর গণতান্ত্রিক যুগের অভিজ্ঞ মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
চলতি বছরের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপারসন। এখন তিনি লড়ছেন এএনসির শীর্ষ পদের জন্য। এটা এখন পর্যন্ত তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের। রোববারের এই নির্বাচনের দলীয় প্রধান হলে ভবিষ্যতে দেশটির প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি।
তার সাবেক স্বামী জুমার সঙ্গে তার রয়েছে চার সন্তান। তবে জুমা দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের জন্য তাকেই দায়ী করা হয়।
ফলে ৬৮ বছর বয়সী দামিনি-জুমাকে প্রতিনিয়ত সমালোচকদের এই প্রশ্নের জবাবে দিতে হচ্ছে যে, তিনি ক্ষমতায় গেলে জুমার শাসনের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করবেন কিনা এবং তার সাবেক স্বামীকে ফৌজদারি বিচারের হাত থেকে সুরক্ষা দেবেন কিনা?
এমনও বলা হয়, তিনি তার সাবেক স্বামীর হাতের পুতুল। তবে এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ অভিযোগের জবাব দিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
এএনসির প্রধান কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নির্বাচিত করা হয়নি। ফলে দামিনি-জুমা নির্বাচিত হলে তা হবে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
জুমা তার সাবেক স্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, তিনি সাহসী এবং তার ওপর আস্থা রাখা যায়। তবে সমালোচকরা তাতে নির্ভার থাকতে পারছেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুসান বুসেন বলেন, ‘দামিনি-জুমা একজন রহস্যময়ী নারী... তাকে বিচার করা কঠিন। এর কারণ তিনি সবসময়ই কারো না কারো ছায়ার নিচে থেকে কাজ করেছেন। তার সমর্থন মূলত তার স্বামী আসনে।’
১৯৪৯ সালের ২৭ জানুয়ারি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কাওয়াজুলু-নাটালে জন্মগ্রহণ করেন দামিনি-জুমা। হাইস্কুলে থাকতেই তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। সত্তরের দশকে তিনি নির্বাসনে যান। তিনি ব্রিটেনের ব্রিস্টল ও লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। এ সময় তিনি প্রবাসে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন।
সোয়াজিল্যান্ডের একটি হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজের সময় জুমার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯৮২ সালে জুমার তৃতীয় স্ত্রীর হিসেবে বিবাহবন্ধনে জড়ান দামিনি-জুমা। এএনসির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ১৯৯০ সালে দেশে ফেরেন তিনি। ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদী সরকারের পতন হলে সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ দেন।
সে সময় দেশটিতে এইডসে বহু লোক মারা যাচ্ছিলেন। ১৯৯৮ সালে প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়। এএফপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন