ইসলাম নিয়ে বক্তব্য দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পাওয়া টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ড. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির অনুরোধ জানিয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের তিরস্কার পেয়েছে ভারত। এই নোটিশ জারি হলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়তেন জাকির। এছাড়া বিভিন্ন দেশের পুলিশি সংস্থার কাছে ভারত একই ধরনের অনুরোধ জানালে তাও প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইন্টারপোল।
গত বছর ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় বিদেশিসহ ২১ জন নিহতও হওয়ার ঘটনায় দুই অভিযুক্ত জাকির নায়েকের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা জানায়। এরপরই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ভারত। বাতিল করা হয় পাসপোর্ট। বন্ধ করে দেওয়া হয তার মালিকানাধীন পিস টেলিভিশনের সম্প্রচার। ঘটনার সময় সৌদিতে ওমরাহ পালনরত জাকির পরে আর ভারতে ফেরেননি। গত ২৬ অক্টোবর আদালতে ৬৮ পাতার অভিযোগ পত্র জমা দেয় ভারতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ।
ইন্টারপোলের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জাকির নায়েক। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিন্ত। তবে আরও নিশ্চিন্ত হবো যদি আমার নিজের দেশের সরকার আর তদন্ত সংস্থাগুলো আমাকে ন্যায়বিচার দিয়ে সব অভিযোগ থেকে আমাকে মুক্ত করে দেয়।’
তবে একে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি পরাজয় হিসেবে দেখছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। জাকির নায়েকের আবেদনে ইন্টারপোলের সাড়া দেওয়ার কারণ হিসেবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ভারতের ‘অপরিপক্ক’ আবেদন দায়ী বলে বিবেচনা করছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের যে প্যানেল এ ধরনের নোটিশের তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় হল কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার পর তিনি যেন অন্য দেশে আশ্রয় নিতে না পারেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চলার সময়ে এই ধরনের নোটিশ জারি করা হয় না।
ভারতীয় ওই আবেদনের আগ পর্যন্ত জাকিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ইন্টারপোল বলছে ভারতীয় আইন অনুসারে কোনো ব্যক্তির বর্হিগমণ রুখতে এটাই মৌলিক চাওয়া।
গত অক্টোবরে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইন্টারপোল বলছে, ‘অভিযোগের এই পর্যায়ে কমিশন দেখেছে আবেদনকারীকে গ্রেফতারে রেড নোটিশ জারি করা একটি অপরিপক্ক কাজ।’
এই কথা জানার পরই গত অক্টোবরে তড়িঘঢ়ি করে মুম্বাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় এনআইএ। তবে তখন তা অনেক দেরি হয়ে যায়।
তবে আনাদালু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় জাতীয় তদন্ত সংস্থার মুখপাত্র অলোক মিত্তাল বিবৃতিতে জানিয়েছেন জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে নতুন করে আবারও রেড নোটিশ জারির অনুরোধ করা হবে।
আমার বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল চলছে: জাকির নায়েক
জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার জাকির নায়েক এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল চলছে।’
সোমবার রাতে টেলিভিশন চ্যানেলটির ওয়েবসাইটে জাকির নায়েকের সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশিত হয়েছে।
সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমি মিডিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছি, একটিও উদাহরণ দেখান যেখানে আমি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেছি। আমি কখনো সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করিনি এবং কখনও করব না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্র আমার বিরুদ্ধে ভুল খবর ছেপেছিল। ভারতীয় মিডিয়া ওই সংবাদপত্রকে উদ্ধৃত করে খবর চালিয়েছে।’
জাকির নায়েক বলেন, ‘আমি যেকোনো টেলিভিশন চ্যানেলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছি, (বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক মহাসচিব) প্রবীণ তোগাড়িয়ার সম্পূর্ণ বক্তব্যও দেখানো হোক এবং আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ দেখানো হোক। এরপরে সাধারণ মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া হোক।’
সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদের ইসলামিক স্টেট বলা অন্যায়, ওরা অনৈসলামিক। আমি সন্ত্রাসবাদকে নিন্দা জানাই।’
আমেরিকা বা অন্য কারো বিরুদ্ধে তিনি মুসলিমদের অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার জন্য বলেননি এবং তিনি কোনো অন্যায় করেননি বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমি কখনো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি খারাপ করা বা কোনো সম্প্রদায়কে খাটো করার চেষ্টা করিনি।
ভারতে ফিরে আসা প্রসঙ্গে জাকির নায়েক বলেন, ‘আমি অনাবাসী ভারতীয় এবং আমার কাছে দুবাই এবং সৌদি আরবের রেসিডেন্ট ভিসা রয়েছে। যদি কোনো সরকারি সংস্থা চায় তাহলে আমি ভারতে এসে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, ‘আমার ১ কোটি ৪০ লাখ ফ্যান রয়েছে, যদি ১০/১৫ জন লোক কারো প্রলোভনে পড়ে ভুল কাজ করে এতে আমার কী দোষ রয়েছে?’
ভারতে বহুলালোচিত ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ প্রসঙ্গে জাকির নায়েক বলেন, ‘আমি অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সমর্থন করি। এ নিয়ে একটি অবজেক্টিভ প্যানেলের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ বিধিকে নির্বাচন করা উচিত। ‘ইসলামিক বিধি’কে আমি শ্রেষ্ঠ বিধি বলে মনে করি।’
জাকির নায়েকের লেকচার শুনে ৮ ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ
দু্বাই: ইসলামী চিন্তাবিদ ড. জাকির নায়েকের আলোচনা শুনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী ৮ ব্যক্তি স্বেচ্চায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
শুক্রবার সেখানকার রশিদ বিন মোহাম্মদ রমজান গ্যাদারিং-এ বিভিন্ন দেশের ১৫ হাজারেরও বেশি নারী পুরুষের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন ড. জাকির নায়েক।
ভারতীয় এই ইসলামি চিন্তাবিদ দু’ঘন্টা ধরে তার বক্তব্য রাখেন। তার আলোচনা শুনে আটজন ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও তিনজন নারী।
অনলাইন খালিজ টাইমস লিখেছে, ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়া এসব মানুষ ভারত, ফিলিপাইন, উগান্ডা, নাইজেরিয়ার। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক ও শ্রোতারা ইসলাম, খিস্ট্রান ধর্ম ও হিন্দু ধর্ম নিয়ে ড. জাকির নায়েকের কাছে প্রশ্ন তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার তিনি বক্তব্য রাখেন ‘মিডিয়া অ্যান্ড ইসলাম’ বিষয়ের ওপর। এতে ড. জাকির নায়েক বলেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়া ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।
জাকির নায়েককে নাগরিকত্ব দিল সৌদি সরকার
ভারত সরকারের হয়রানির শিকার হয়ে গত বেশ কিছু দিন যাবত বিদেশে অবস্থান করছেন ইসলাম প্রচারক ডা. জাকির নায়েক। এমন পরিস্থিতিতে তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেছে সৌদি আরব।
‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করে গত মাসে জাকির নায়েককে গ্রেপ্তার করতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরোয়ানা জারির সময় জাকির মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এরপর তিনি ভারতে না ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রায় ৫ বছর আগে মালয়েশিয়া সরকার জাকির নায়েককে স্থায়ী রেসিডেন্সি পারমিট দিয়েছিল।
বর্তমান জাকির সৌদিতে অবস্থান করছেন এবং বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সরাসরি হস্তক্ষেপে তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ভারতের পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জাকির নায়েকের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এমতাবস্থায় সৌদিতে অবস্থানরত ডা. নায়েককে ভারতে ফেরত পাঠাতে বাধ্য থাকতো সৌদি সরকার। কিন্তু নাগরিকত্ব দেয়ার ফলে এখন তাকে ভারত সরকারের চাহিদা মতো জন্মভূমিতে ফেরত পাঠাতে বাধ্য থাকবে না সৌদি আরব।
৫১ বছর বয়সী এই ইসলাম প্রচারকের বিরুদ্ধে ভারত সরকার অভিযোগ তুলে, ঢাকার গুলশানে আর্টিজান হোটেলের হামলাকারীরা জাকির নায়েকের বক্তব্য থেকে ‘অনুপ্রেরণা’ নিয়েছিল। যদিও ভারত সরকারের এমন অভিযোগ ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।
সূত্র: মিলি গেজেট।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন