রাখাইনের ইনদিন গ্রাম থেকে পালিয়ে বাঁচা রোহিঙ্গারা বলেছেন, যে ১০ ব্যক্তিকে হত্যার কথা মায়ানমার সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, তারা জঙ্গি ছিলেন না। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তারা এ তথ্য দেন।
টেকনাফের বালুখালি ক্যাম্পে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ইনদিন গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা ৩০ বছর বয়সি যুবতী মারজান এএফপিকে বলেন, স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের একদল লোক সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের গ্রামে আক্রমণ করে।
‘তারা ১০ থেকে ১৫ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে নিয়ে বৈঠক করার কথা বলে নিয়ে যায়। পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।' বলছিলেন মারজান।
তারা ছিলেন সাধারণ রোহিঙ্গা
মারজান জানান, তার স্বামীও সেই দলে ছিলেন। পরে অন্যদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
‘ওরা আমাকে বললেন যে, আমার স্বামীর লাশ অন্যদের সঙ্গে একটি গণকবরে পাওয়া গেছে।'
হোসেইন আহাম্মাদ নামের ইনদিন গ্রামের আরেক যুবক এএফপিকে জানান যে, যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই সাধারণ রোহিঙ্গা গ্রামবাসী ছিলেন। ‘তারা এমনকি কোনো আন্দোলনেও কখনো যাননি।' বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক তদন্ত
গেল বুধবারের আগ পর্যন্ত মায়ানমার সেনারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলো।
বুধবার দেশটির সেনাপ্রধানের অফিসের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে প্রথম ইনদিন গ্রামের গণকবরের সত্যতা স্বীকার করা হয় এবং বলা হয় যে, কয়েকজন গ্রামবাসী ও সেনাসদস্য মিলে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। তবে নিহতদের ‘বাঙালি জঙ্গি' বলে আখ্যায়িত করা হয়।
ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
রোহিঙ্গাদের হত্যার বিষয়টি বড় আকারে তদন্তের দাবি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। মুসলিম দেশগুলোও বলছে যে, বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার।
মায়ানমার সেনাদের স্বীকারোক্তিকে একটি বড় পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন মায়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েল।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে এক ফোরামে তিনি বলেন, ‘আমি এই ঘটনার আরো স্বচ্ছ তদন্ত আশা করব। একইসঙ্গে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা দরকার। কারণ, এটি শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মায়ানমারের দায় নয়, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’
রোহিঙ্গা ফেরত আনতে জাপানের অর্থ
এদিকে, অং সান সু চির সঙ্গে দেখা করে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী তারো কোনো রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত আনার তাগিদ দিয়েছেন। শুক্রবার নেইপিদোতে সু চি'র সঙ্গে সাক্ষাতের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হবে।
রাখাইনে শান্তি ফেরত আনা এবং বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া লাখো শরণার্থীকে ফেরত এনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য মায়ানমারকে ১৮০ কোটি টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান।
সু চি এই অর্থ সহায়তা দেবার অঙ্গীকার করবার জন্য জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
রয়টার্সের সাংবাদিকদের সাজা
এদিকে, ঔপনিবেশিক যুগের ‘অফিসিয়াল সিক্রেসি' আইনে গ্রেপ্তার করা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ের ১৪ বছরের জেল হয়ে যেতে পারে। আদালত তাদের জামিন আবেদন এখনো মঞ্জুর করেননি।
গত ১২ই ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের কাছের একটি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের আমন্ত্রণেই সেখানে গিয়েছিলেন তারা। তারা দু'জন রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মায়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন।
গত ২৫ আগস্ট থেকে মায়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন' বলে আখ্যা দিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি, তারা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন