সম্প্রতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। যার ধারাবাহিকতায় পদত্যাগ করেছেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
সেই প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে ভিন্ন এক ঘটনা ঘটেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। দেশটির প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রিম কোর্টেরই জ্যেষ্ঠ চার বিচারপতি।
‘কোন মামলার শুনানি কোন বেঞ্চে হবে, তা ঠিক করার ক্ষেত্রে অন্যায্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে। এবং কয়েকজন বাছাই করা বিচারপতির বেঞ্চেই পাঠানো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মামল- এমন অভিযোগ এনে দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন বিচারপতি চেলামেশ্বর, বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি মদন বি লোকুর।
প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনার পর এখন কি করবেন সে দেশের প্রধান বিচারপতি?
তার বিরুদ্ধে ‘ইম্পিচমেন্টের’ প্রক্রিয়া শুরু হবে কি না-এমন প্রশ্নে যদিও বিচারপতি চেলামেশ্বর বলেছেন, ‘সেটা জাতিকেই ঠিক করতে হবে। আমরা কিছু বলছি না।’
এ বিষয়ে ভারতের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের প্রশাসনিক ভূমিকার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তারা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির কোনো অভিযোগ সরাসরি তোলেননি। অতএব, এক্ষেত্রে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা এখনই দেখতে পাচ্ছি না।’
‘আর প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করতে হলে লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস করাতে হয় ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব। তারপর রাজ্যসভায় সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস করাতে হয়। রাজ্যসভায় আটকে গেলে, যৌথ অধিবেশন ডেকে ফের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রস্তাব পাস করাতে হয়।’
তবে চার বিচারপতির সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের কাছ থেকে এখনো কোন প্রতিক্রিয়া আসেনি।
গত বছরের শেষে বাংলাদেশের প্রধান বিভারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে গুরুতর অভিযোগ জানার পর আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতি তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসতে অস্বীকৃতির কথা জানিয়ে এক বিবৃতি দেয় সুপ্রিমকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা বলা হয়।
তবে এর একদিন আগে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে বাসার গেটে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে একটি বিবৃতি তুলে দেন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
নজিরবিহীন সেই বিবৃতিতে এসকে সিনহা বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানিং একটি রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। সরকারের একটি মহল তার রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি অভিমান করেছেন।’
এর আগে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
সে রায় প্রকাশের পর সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। সে রায়ে এসকে সিনহার দেয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন সরকারের মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি তোলেন।
সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া থেকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে আসেন বিচারপতি এসকে সিনহা। পরে সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। পরবর্তীতে সে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন