মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বেকারত্বের হার বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোনো দেশের উন্নয়ন পরিমাপ করা হয়। উন্নয়ন পরিমাপে এ পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে শত বছর ধরে। কিন্তু রাষ্ট্র তার জনগণকে কতটা সুবিধা দিতে পারছে তা নির্ধারণে এ পদ্ধতি শুধু অসম্পূর্ণ নয়, অকার্যকরও হতে পারে।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান- মানুষের মৌলিক চাহিদা তিনটি। সামাজিক উন্নয়নে মৌলিক চাহিদার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে অনেক সময় তুলনামূলক দরিদ্র দেশগুলো তাদের সমকক্ষকে ছাপিয়ে যায়। সোশ্যাল প্রোগ্রেস ইনডেক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল গ্রিন , ‘উচ্চতর সামাজিক উন্নয়নের মধ্যেই রয়েছে ধনী দেশগুলোয়। সে অর্থে আরও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মোটেই নেতিবাচক কোনো ধারণা নয়। অর্থনীতির পরিবর্তনশীল উপাদানগুলো সামাজিক উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করতে পারে না। জিডিপিও এক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরিমাপক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সোশ্যাল প্রোগ্রেস ইনডেক্স বিভিন্ন দেশ তাদের জনগণের চাহিদা কতটা পূরণ করতে পারছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। পরে তা পর্যালোচনা থেকে তৈরি হয় বিশ্বের দেশগুলোর র্যাঙ্কিং।
নীতি নির্ধারণে সোশ্যাল প্রোগ্রেস ইনডেক্স ব্যবহার করে থাকে বিভিন্ন বিষয়ের সূচক। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থ সহায়তা প্রাপ্তির সম্ভাবনার অনেকটাই এই সূচকের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক পূর্বাভাস মেলে এই সূচক থেকে। একটি রাষ্ট্র কি হারে উন্নত বা অনুন্নত হচ্ছে কিংবা আগের অবস্থানেই রয়ে গেল কি না তাও বোঝা যায়।
অনেকেই বলে থাকেন, বর্তমান মার্কিন সরকার পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে কম কার্যকর। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি মার্কিনদের বিশ্বাসের মাত্রা এ যাবতকালের সর্বনিম্ন। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গভর্ন্যান্স ইনডিকেটরসে (ডব্লিউজিয়াই) বলা হয়, মোটা দাগে ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন সরকারের কার্যকারিতা প্রায় একই আছে।
অন্যান্য দেশগুলোরও দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তিউনিসিয়াতে ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বাক স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতার হার হ্রাস পেয়েছে। দেশটিতে বাক স্বাধীনতা ও দায়বদ্ধতা কমার হার ২০১১ সালে আরব বসন্তের পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে।
জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সোশ্যাল প্রোগ্রেস ইনডেক্সের তালিকায় প্রথম শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে আছে। কিন্তু সামাজিক উন্নয়নের দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান ১৮তম। নেদারল্যান্ডস, চিলি, ফিলিপিন্সের জিডিপি সমপর্যায়ে থাকা সৌদি আরব, কাজাখস্থান, অ্যাঙ্গোলার কাছাকাছি থাকলেও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে অনেকটাই এগিয়ে।
সোশ্যাল প্রোগ্রেস ইনডেক্সের কাঠামোতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও (ইইউ) একই রকম ফল পেয়েছে। সুইডেনের জিডিপি বুখারেস্ট ও রোমানিয়ার সমপর্যায়ে থাকলেও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে দেশটি অনেক এগিয়ে।
সোশ্যাল প্রোগ্রেস ইনডেক্সের সূচক এখন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- ইইউর নীতিনির্ধারণ করতে এটিকে তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
অনেকে মনে করেন সামাজিক উন্নয়ন সূচক একটি বিতর্কিত ধারণা। এর অনেক কিছুই পশ্চিমা মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ ধরনের সূচক ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়ে থাকে। তবে কাজ শুরু করতে এবং অন্তর্নিহিত বিষয় যাচাইয়ে এ ধরনের ইনডেক্স অত্যন্ত কার্যকর।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন