পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খুররম দস্তগীর খান ঘোষণা করেছেন, পাকিস্তান আমেরিকার সঙ্গে গোয়েন্দা কার্যক্রমগুলো বাতিল করে দিয়েছে। এটি মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কে একটি নতুন মোড় বলেই মনে করছেন অনেকে।
নতুন বছরের শুরুতে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পরই ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেখানে ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রতি মিথ্যা ও শঠতার অভিযোগ আনেন।
এরপর থেকেই ওয়াশিংটন ঘোষণা দেয় তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধ করে দেবে। এরপরই পাকিস্তানি রাজনীতিবিদরা জানায় তারা আর জোট নয় এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান মন্তব্য করেন, তিনি প্রতারিত বোধ করছেন।
তবে এসব বক্তৃতা আর বিবৃতির দিকে তাকালে দেখা যায়, দু’পক্ষই খুবই সচেতনভাবে এই বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এই নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রত্যাহার খুবই অল্প সময়ের ব্যাপার। এই অর্থায়ন এরপরও কয়েক দফায় চলতে থাকবে। আর সেটা নির্ভর করবে পাকিস্তানের পরিমাপযোগ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।
তবে কেউ কেউ প্রত্যাশা করছেন খুররম দস্তগীর খানের এই ঘোষণা প্রতিকী মূল্য ছাড়াও আরো বেশি কিছু হবে। এর আগেই পাকিস্তান তাদের গোয়েন্দা শক্তির অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে গত দুই দশকে।
১৯৫০ সাল থেকে জোট হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। সেই সময়ে পাকিস্তানের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা প্রয়োজন মেটাতে আমেরিকার সাহায্য সেখানে পৌঁছায়।
১৯৫৯ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে পাকিস্তান পেশোয়ারের কাছে একটি মূলভূমি প্রদান করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে যেন তারা সেখান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রেডিও ট্রান্সমিশন বিবৃতি শুনতে পারে।
এরপর ১৯৮০ সালে, দুই দেশ এক সঙ্গে আফগান যুদ্ধে সহযোগিতা করে। সেসময় পাকিস্তানের মাটিতে থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দাদের দ্বারা সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত হয়ে আফগানরা যুদ্ধ করে।
কিন্তু ২০০১ সালে যুক্তরাষ্টে নাইন ইলেভেনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি হতে থাকে। আমেরিকা আফগানিস্তানে তাদের অবস্থান গড়ে তোলে এবং পাকিস্তানকে তাদের সাপ্লাইরুট হিসেবে এবং একই সঙ্গে গোয়েন্দা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।
দুই দেশের আলোচনা এমন জায়গা ছিলো যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রযুক্তি সরবরাহ করবে যেমন যোগাযোগের মাধ্যম এবং ড্রোন আর পাকিস্তান মানব বুদ্ধিমত্তা সরবরাহ করবে।
সম্পর্কের গুরুত্বটা তখন নির্ভরশীল ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের মূল উপদেষ্টামন্ডলীতে থাকা ইসলামী চরমপন্থীদের উপরে। এবং তারা ঘণীভূত হয়েছিলো পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম অংশে। আর তাদের পরাজিত করা পাকিস্তানের সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভবপর ছিলো না যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে।
সম্পর্কে সমস্যাটা তৈরি হয় ১৯৮০ সালে। যখন পাকিস্তান দলটিকে ব্যবহার করে আফগানিস্তান থেকে ভারতের প্রভাব মুক্ত করার চেষ্টা করেন।
পাকিস্তান যখন যুক্তরাজ্যকে কোনো আল-কায়েদা নেতাকে গ্রেফতার বা বের করে নেওয়ার কাজে সাহায্য করে তখন কোনো আল কায়েদা বা আল হাক্কানী নেতা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যেতে পারেনা। পার্থক্য ঘটে শুধু ২০১০ সালে। যখন তালেবানদের প্রধান সেনা কমান্ডার মুল্লাহ বিরাডার পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যান। সেটা আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের শান্তির কথার অংশ বলেই মনে করেন অনেকে।
দীর্ঘ সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক প্রমাণ করে, দুই দেশের সম্পর্কের অনেকটাই একে অন্যের উপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন