গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জেলেদের উপর ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই হামলা চালায়। তবে শনিবার আব্দুল্লাহ জেইদান নিহত হয়েছেন মিসরীয় বাহিনীর গুলিতে। শুক্রবার রাতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই এ খবর জানিয়েছে।
গাজার সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির আল সাতির বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জেইদান। শুক্রবার রাতে গাজার দক্ষিণে মিসর সীমান্তের কাছে সাগরে মাছ ধরার সময় মিসরীয় বাহিনী তার বুকে গুলি করে। এতে গুরুতর আহত হলে শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। এরপর তার আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার বাড়িতে হাজির হন।
আব্দুল্লাহর মা মরিয়ম জেইদান প্রশ্ন করেন, তার ছেলের কী পাপ ছিল? সে তো তার চার সন্তানের জন্য খাবার যোগাড় করার চেষ্টা করেছিল!
ইসরায়েলি প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে আব্দুল্লাহ ভেবেছিলেন, মিসরীয়রা হয়তো কম নিষ্ঠুর হবে। এ কথা জানিয়ে নিহত আব্দুল্লাহর বাবা রামাদান বলেন, ‘আর কোনও কাজ না পেয়ে ১৫ বছর বয়সে আমার ছেলে এই পেশায় যোগ দেয়।’ রামাদান চিৎকার করে বলেন, ‘কেন একজন নিরস্ত্র জেলেকে গুলি করে হত্যা করা হলো?’ তিনি দাবি করেন, ‘সে তো মিসরীয় সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালায়নি। সে ফিলিস্তিনি জলসীমার মধ্যেই মাছ ধরছিলো।’ তিনি ছেলে হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে মিসরীয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচারও দাবি করেন রামাদান।
গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিয়াদ আল বোজুম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে ফিলিস্তিনি মাছ ধরার নৌকাটি মিসরীয় জলসীমা অতিক্রম করেনি। আমরা মিসরীয় কর্তৃপক্ষকে জরুরিভিত্তিতে ঘটনাটি তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’ তবে এ ঘটনায় মিসরের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজা মৎসজীবী ইউনিয়নের মতে, গাজার ৪০ কিলোমিটার উপকূলে ফিলিস্তিনের প্রায় তিন হাজার জেলে মাছ ধরেন। সেখানেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদেরকে মাত্র ১০ কিলোমিটারের মধ্যে মাছ ধরাসহ সীমিত করাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। এই সীমিত জায়গায় মাছ ধরে গাজার ২০ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এসব নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের কারণে প্রায়ই জেলেদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগেও সীমানা অতিক্রম করার অভিযোগে জেলেদের উপর গুলি চালিয়েছিল মিসরীয় বাহিনী।
এদিকে আব্দুল্লাহ জেইদানকে হত্যার প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন মৎসজীবী ইউনিয়নের প্রধান নাজার আয়িশ।
মিসরিয় কর্তৃপক্ষ দেশটির উত্তরাঞ্চলের সিনাই প্রদেশে কয়েক বছর ধরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ওই অভিযানের অংশ হিসেবে তারা গাজা সীমান্তে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করে নৌ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আল মিজান জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দুই জেলেকে হত্যা করার পাশাপাশি ৩৯ জনকে গ্রেফতারও করে। তারা সাতটি নৌযান ধ্বংস করেছে ও ১৩টি জব্দ করেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন