সবকিছু অপ্রত্যাশিতভাবে হতে লাগলো। অকস্মাৎ খবর আসা ধরলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেন ডনাল্ড ট্রাম্প। একপর্যায়ে নিশ্চিত খবর এলো তিনিই হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। এ সময় ট্রাম্পের চোখমুখের অভিব্যক্তি হয়েছিল ভিন্ন রকম। তারই ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, এ সময় তার পিতাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি ভূত দেখেছেন। অর্থাৎ ভূত দেখার পর একজন মানুষের যেমন অভিব্যক্তি হয়, মুখাবয়বের যে দশা হয় তেমনটা হয়েছিল ট্রাম্পের।
এসব কথা ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড ট্রাম্পস হোয়াইট হাউস’ বইয়ে লিখেছেন সাংবাদিক মাইকেল ওলফ। তিনি এতে আরো অনেক অজানা কথা তুলে ধরেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, সম্ভবত অসাবধানতার চেয়েও কিছুটা কম। ট্রাম্পের প্রচারণা মেল ব্রুকসের ‘দ্য প্রডিউসারস’-এর যেন প্রতিলিপি। এই ক্লাসিকে ব্রুকস সামনে নিয়ে এসেছেন নির্বোধ ও একপেশে নায়ক ম্যাক্স বিয়ালিস্টোক ও লিও ব্লুমকে। এটা যখন প্রযোজনা হাউসে তখন ব্রডওয়ে শোতে এর শতকরা ১০০ ভাগেরও বেশি মালিকানা বিক্রি হয়ে গেছে। শো’টি যদি হিট হয় তাহলেই শুধু তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে। আর যদি এটি ফ্লপ হয় তাহলে এর সবকিছুর বিষয়ে আগে থেকে একটি ধারণা করে রাখা হয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা ঔদ্ধত্য বা আত্মমুগ্ধতা বা নিয়তির অতিপ্রাকৃতিক ভাবধারায় পরিচালিত হয়েছেন। তারা তাদের ক্যারিয়ারের বড় একটি সময় অতিবাহিত করেছেন। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে তারা তাদের ভূমিকার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। তারা বেড়ে উঠেছেন নির্বাচিত পদে দায়িত্ব পালনের জন্য। নির্ভুলভাবে তারা সরকারি মুখাবয়ব ধারণ করেন। তারা রাজনীতিতে সফল হওয়ার পর তাদের মিত্রদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি নেটওয়ার্ক। তারা যেন ঠেসে বোনা। (এমনকি জর্জ ডব্লিউ বুশ তার পিতার অবলম্বনের ওপর নির্ভর করেছিলেন)। নিজেদের বিষয়ে তারা পরিষ্কার রাখেন। অথবা অন্ততপক্ষে, বিভিন্ন বিষয় চাপা দেয়ার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা নিয়ে থাকেন। তারা বিজয়ী হতে এবং শাসন করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেন।
তবে ট্রাম্পের বিষয়টি, সচেতনভাবেই আলাদা। তিনি এবং তার শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করতেন তারা তাদের আচরণ পরিবর্তন ছাড়াই, বিশ্ব বিষয়ক তাদের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না করেই সব রকম সুবিধা পাবেন। তাদের একটিই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তা হলো: নিজেদের ছাড়া আমাদের কিছু দরকার নেই। কারণ, অবশ্যই আমরা বিজয়ী হবো। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে যত প্রার্থী এসেছেন তাদের রয়েছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। তার সঙ্গে থেকেছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কিন্তু ট্রাম্পের ভেতরের বৃত্তে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি নিয়ে কাজ করেছেন। এমন কি তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও ছিল না। সারা জীবনে ট্রাম্পের কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল না এমনটা বলা যায়। তিনি যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তখন তার এমন কোনো বন্ধু ছিলেন না, যে বা যিনি রাজনীতিতে যুক্ত। এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম হলেন রুডি গিলিয়ান ও ক্রিস ক্রিস্টি। তারা দুজন শুধু ছিলেন রাজনীতিতে যুক্ত। তবে তারা দুজনেই ছিলেন বিচ্ছিন্ন। তিনি (ট্রাম্প) গুরুপত্বপূর্ণ পদটির (প্রেসিডেন্ট) বুদ্ধিদীপ্ত মৌলিক ভিত্তির বিষয়ে কিছু জানেন না, কিছুই জানেন না। তিনি এটাকে দেখেছেন শুধু একটি কমিক বা কৌতুক হিসেবে। বইটিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (পরে বরখাস্ত) মাইকেল ফ্লিন, প্রচারণা ম্যানেজার পল ম্যানাফোর্ট সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়। আলোচনা করা হয় নির্বাচনে রাশিয়া ইস্যু। সাংবাদিক মাইকেল ওলফ তার বইতে আরো লিখেছেন, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট অথবা দু-একজন রাজনীতিক ছাড়া রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না। এ ব্যবসায় জড়িত ট্রাম্পের জামাই জারেড কুশনার, জারেডের পিতা চারলি কুশনার, ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়র, এরিক, মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ও ট্রাম্প নিজে। তারা সবাই চেষ্টা করেছেন ব্যবসাকে প্রাধান্য দিতে।
টি পার্টি মুভমেন্টের মূল নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল স্টিভ ব্যাননের। কেলিয়ানি কনওয়ে হতে পারতেন একজন ক্যাবল নিউজ স্টার বা টেলিভিশনে সংবাদ পাঠিকা। চূড়ান্ত পরিণামে ট্রাম্প হেরে গেলে রেইন্স প্রিবাস ও কেটি ওয়ালস রিপাবলিকান পার্টিকে তাদের অধীনে ফিরে পেতেন। ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর পর্যন্ত তারা এমনটার জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় সময় রাত আটটার অল্প পরেই অপ্রত্যাশিত একটি প্রবণতা দেখা দিতে লাগলো। তা হলো নির্বাচনে ট্রাম্প জিতে যেতে পারেন। এক সময় এটা দৃশ্যত নিশ্চিত হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে বন্ধুদের কাছে পিতা ডনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, এ সময় তার পিতার এমন চেহারা সুরত হয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল তিনি ভূত দেখেছেন। স্ত্রী মেলানিয়াকে পবিত্র নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেই মেলানিয়াকে দেখা গেলো কাঁদছেন। তবে সেই কান্না আনন্দের নয়। এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে স্টিভ ব্যাননের হিসাব-নিকাশ এলোমেলো হয়ে গেল। ট্রাম্প যেন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। তখনও নির্বাচনের ফল আসছিল। চূড়ান্ত দফা ফল আসছিল। মুহূর্তের মধ্যে ডনাল্ড ট্রাম্প এমন একজন মানুষে পরিণত হলেন, বিশ্বাস করা হয়, তিনি এর যোগ্য ছিলেন এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পুরোপুরি যোগ্য।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন